নির্দিষ্ট দিনে টাকা ফেরত না পেয়ে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার মালিকের বাড়িতে হানা দিয়ে ভাঙচুর চালালেন কয়েক’শ আমানতকারি ও এজেন্ট। বুধবার বিকেলে ফালাকাটার রবীন্দ্রনগর এলাকার ঘটনা। উত্তেজিত জনতা বাড়ির বাইরে থাকা একটি স্কুটারে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে ওই বাড়ি থেকে সংস্থার মালিকের মা ও তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। ফালাকাটার থানার আই সি ধ্রুব প্রধান বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা এক যুবক দেড় বছর আগে কোচবিহার শহরে ইউনিস্টার নামে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার অফিস চালু করেন। অফিসটি চালু করার সময় আজহারউদ্দিন নামের ওই যুবক পরিচয় গোপন করেন। তিনি নিজেকে রাজবীর চৌধুরী বলে পরিচয় দেন। দামি গাড়িতে করে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি নিজেকে বড় ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন। কোচবিহার বিমান বন্দরে তিনি উড়ান পরিষেবা চালু করা সহ মিনারেল ওয়াটারের কারখানা চালাচ্ছেন বলে মিথ্যে কথা প্রচার করেন। এর পরেই চড়া সুদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্ট তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন। বছর খানেক আগে ফালাকাটার সুভাষপল্লিতে তিনি শাখা অফিস খুলে ব্যবসা শুরু করেন। রাজবীর চৌধুরী নামে কলকাতার বাসিন্দা ব্যবসা করছেন বলে ফালাকাটায় প্রচার করা হয়।
লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিন তলা বাড়ি তৈরি করে আজহারউদ্দিন। গত জানুয়ারি মাস থেকে কোম্পানি আমানতকারীদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। কোচবিহারের অফিস বন্ধ করলেও ফালাকাটার অফিস দিন পনেরো আগে দুই কর্মী খুলে রাখতেন। গত ২৬ এপ্রিল একদল আমানতকারী ও এজেন্ট টাকার দাবি করে ইউনিস্টার অফিসে বিক্ষোভ দেখান। অফিসের ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে গিয়ে জনতা অভিযুক্তের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায়। সে সময় ম্যানেজারকে ফোন করে পনেরো দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এদিন টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ লোকজন তাঁর বাড়িতে চড়াও হন। সে সময় রাজবীর ওরফে আজহারের মা ও স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন। তাঁরা একটি ঘরে আশ্রয় নেন। উত্তেজনা বাড়ায় ফালাকাটা থানার পুলিশ গিয়ে ওই বাড়ি থেকে দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। প্রায় তিন মাস ধরে তাঁর ছেলে বাড়িতে নেই বলে জানান আজহারের মা সানসুর বেগম। তাঁর স্ত্রী সায়রা বেগম বলেন, “বাইরের লোকজন তাকে রাজবীর বলে ডাকেন। তিনি কী করতেন তা জানি না।”
অন্য দিকে, বুধবার শিলিগুড়িতে শ্যামল সেন কমিশনের ২ হাজার ৩১৫টি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে কোচবিহার থেকে ১১৫টি, জলপাইগুড়ি ৫৩৬, দার্জিলিং ৪২৫, উত্তর দিনাজপুর ৪৯৮, দক্ষিণ দিনাজপুর ২২২, মালদহ ৩৪৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়া বিহার ও অসম থেকে ১৭৪টি অভিযোগ পড়েছে। সব মিলিয়ে গত সাতদিনে ৬ হাজার ৩৬৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। রবিবার কমিশন বন্ধ ছিল। |