|
|
|
|
ডাইন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করে ‘বঙ্গভূষণ’ দাখিনচন্দ্র
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
এ বার ‘বঙ্গভূষণ’ সম্মান পাচ্ছেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী সাংবাদিক ও শিক্ষাব্রতী দাখিনচন্দ্র মুর্মু।
লালগড়ের বেলাটিকরি অঞ্চলের ধানঘোরি গ্রামের ৭৫ বছরের দাখিনবাবুর কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাক্ষরিত চিঠি এসে পৌঁছেছে বুধবার। আগামী সোমবার, ২০ মে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে তাঁকে সম্মানিত করা হবে। আদিবাসী সমাজের অশিক্ষা, দারিদ্র, বাল্যবিবাহ, ডাইন প্রথা-সহ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতিতে দাখিনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “এই সম্মান শুধু আমার নয়, জঙ্গলমহলবাসীরও।” |
|
দাখিনচন্দ্র মুর্মু। —নিজস্ব চিত্র। |
কৃষক পরিবারের সন্তান দাখিনবাবু বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে কৃষিবিদ্যায় এমএসসি করার পরে লালগড়ের রামগড় মোক্ষদা সুন্দরী হাইস্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক পদে যোগ দেন। দাখিনবাবু সম্পাদিত ‘দেবোন তিঙ্গুন’ (এসো আমরা এক হয়ে দাঁড়াই) সংবাদ ও সাহিত্য পত্রিকাটি এক সময় আদিবাসী সমাজে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। টানা পঁচিশ বছর ধরে (১৯৭০-১৯৯৫) পত্রিকাটি ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রকাশ করে গিয়েছেন দাখিনবাবু। বাংলা হরফে লেখা সাঁওতালি ভাষার ওই পত্রিকাটিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অভাব, অভিযোগ ও বঞ্চনা সংক্রান্ত সংবাদ, প্রবন্ধ প্রকাশিত হত। দাখিনবাবুর কথায়, “শিক্ষার অভাবে আদিবাসীরা পিছিয়ে রয়েছেন। আমার একার পক্ষে সমাজটাকে পাল্টানো সম্ভব ছিল না। সেই কারণেই শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেওয়ার সাত বছরের মাথায় দেবোন তিঙ্গুন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই। লড়াইটা কঠিন ছিল। তবে নিজের গ্রামে ডাইন প্রথা বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছি।”
স্বাস্থ্যের কারণে ১৯৯৫ সালে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন দাখিনবাবু। ১৯৯৮ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। তবে লেখালেখি বন্ধ করেননি। সমস্ত লেখা নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। অবসর নেওয়ার পর এখন চাষবাস নিয়ে সময় কাটে। ডাইন প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য এখনও নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। দাখিনবাবুর কথায়, “কিছু ধান্দাবাজ লোক স্বার্থসিদ্ধির জন্য কুপ্রথাগুলি জিইয়ে রাখতে চায়।”
জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনীতিতেও জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তবে সফল হননি। ’৬৪-’৭৫ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত ঝাড়খণ্ড পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরে যোগ দেন জনতা পার্টিতে। ১৯৭৭ সালে দাখিনবাবু বিনপুর বিধানসভা আসনে জনতা দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কয়েকশো ভোটের ব্যবধানে তিনি সিপিএম প্রার্থী শম্ভুনাথ মাণ্ডির কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৯ সালে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হন। সে বার লক্ষাধিক ভোটে সিপিএমের রূপচাঁদ মুর্মুর কাছে পরাজিত হন তিনি। দাখিনবাবুর কথায়, “পরে বুঝেছিলাম রাজনীতি আমার ধাতে নেই।”
সাঁওতালি ভাষার অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের দাবিতে অজয় মুখোপাধ্যায়, জ্যোতি বসুর মতো একাধিক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মহাকরণে দেখা করে দরবার করেছিলেন। দাখিনবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যথেষ্ট আন্তরিক বলে মনে হয়। প্রাথমিক থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সাঁওতালি ভাষায় পঠন-পাঠনও বিকাশ হবে বলেই আশা করি।” |
|
|
|
|
|