বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব যাঁরা দিয়েছেন, অনুমোদন মঞ্জুরির আগে তাঁদের আয়ের উৎস খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে সরকারের গড়া কমিটি। সৌজন্য, সারদা-কাণ্ড।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাজ্যের দরজা খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাব খুঁটিয়ে দেখে অনুমোদনের বিষয়ে রাজ্যকে সুপারিশ করার জন্য গড়া হয়েছে কমিটি। কিছু কাল আগে এই ধরনের সরকারি কমিটির সুপারিশ মতোই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যুক্ত একটি সংস্থাকে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিকাঠামো থেকে শিক্ষক, পাঠ্যক্রম থেকে পড়ুয়াদের সুযোগ-সুবিধা সব দিকই কমিটির বিবেচনাধীন থাকলেও সংস্থার আয়ের উৎসকে আতসকাচের নীচে ফেলে দেখার প্রশ্ন এত দিন ওঠেনি।
কিন্তু সারদা-কাণ্ডের পরে এ ব্যাপারে কমিটি ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থা সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করেছে। সারদা-কাণ্ডের জেরে সেগুলোর বেশ ক’টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কয়েকটি ধুঁকছে। ওই ধরনের কোনও অর্থলগ্নি সংস্থা অন্য নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাইছে কি না, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি বলে ভাবছেন শিক্ষা প্রশাসনে যুক্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। কমিটির চেয়ারম্যান তথা উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, “সারদার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই সতর্ক হতে চাইছি, এমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে অনেক টাকার দরকার। এত টাকা কোথা থেকে আসছে, তা দেখা জরুরি।”
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হলে প্রথম পাঁচ বছরের জন্য প্রায় একশো কোটি টাকার সংস্থান রাখতে হয়। এর মধ্যে ব্যাঙ্কে রাখতে হবে অন্তত ১১ কোটি ১ লক্ষ। বাকিটা পাঁচ বছর বিশ্ববিদ্যালয় চালানো বাবদ। এই টাকার পুরোটা সংস্থার নিজের না-ও হতে পারে। ঋণ, অনুদান, ছাত্রছাত্রীদের ফি সবই এর মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু তা হলেও এত টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে, সেটাই রাজ্য সরকারকে যাচাই করতে বলবে কমিটি।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়ার জন্য সাত সদস্যের পৃথক পৃথক কমিটি গড়ছে রাজ্য। এতে তিন জন স্থায়ী সদস্য উচ্চশিক্ষা দফতরের দুই আধিকারিক, এবং কমিটির চেয়ারম্যান পদে উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান। কমিটির কাজ হল, বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে রাজ্যকে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার আবেদনে ছাড়পত্র দেওয়া বা না-দেওয়ার সুপারিশ করা।
উচ্চশিক্ষা দফতরের খবর: শান্তিনিকেতনে সিকম স্কিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বারুইপুরে ইআইআইএলএম সংস্থার সোনার বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব সম্পর্কে কমিটির রিপোর্ট তৈরি। দু’-এক দিনের মধ্যে তা সরকারের কাছে জমা পড়ার কথা। দু’টি ক্ষেত্রেই ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে তার আগে কমিটি রাজ্য সরকারকে দেখে নিতে বলছে, সংস্থা দু’টির আয়ের উৎস কী। “আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা কমিটির কাজ নয়। কমিটির পক্ষে তা সম্ভবও নয়। এটা পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষেই করা সম্ভব।” মন্তব্য অভিজিৎবাবুর। যদিও কোনও বিশেষ উৎস থেকে আয় করা টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না এমন সুপারিশ কমিটি করছে না। বিষয়টি তারা রাজ্য সরকারের উপরেই ছাড়ছে।
এখনও অবশ্য কোনও অর্থলগ্নি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে চেয়ে আবেদন জানায়নি বলেই দফতর-সূত্রের খবর।
|