দু’টি বেসরকারি বিএড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ছাত্রভর্তির অভিযোগ এনেছে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঘটনাটিকে ঘিরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চাপানউতোর শুরু হয়েছে। পরীক্ষায় বসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই দু’টি কলেজের ৫৩ জন পড়ুয়ার।
কলেজ দু’টি হল, সাঁওতালডিহির দেবেন মাহাতো স্মৃতি বিএড কলেজ ও বোরো থানার হলধর মাহাতো টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ওই দু’টি কলেজ কর্তৃপক্ষ বিধিবহির্ভূত ভাবে ৫৩ জনকে ভর্তি করেছেন। তাই তাঁদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই দুই কলেজ কর্তৃপক্ষ।
২৩ মে থেকে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বিএড কলেজগুলির পড়ুয়াদের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দেয়, দেবেন মাহাতো স্মৃতি বিএড কলেজের ১৭ জন এবং হলধর মাহাতো টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ৩৬ জন পড়ুয়াকে বিধি মেনে ভর্তি করানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে বলেন, “রেজিস্ট্রেশনের সময় নজরে আসে দু’টি কলেজেই বিধি ভেঙে কিছু পড়ুয়াকে ভর্তি করানো হয়েছে। তাই তাঁদের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব নয়।”
কী ভাবে ছাত্র ভর্তিতে বিধি ভেঙেছে কলেজ দু’টি? বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ভাবে মেধা তালিকার ভিত্তিতে কাউন্সেলিং করে ছাত্রদের নামের তালিকা কলেজগুলিতে পাঠানো হয়েছিল। দেবেন মাহাতো স্মৃতি কলেজে ৯৩ জনের নাম পাঠানো হয়। পরে ১৭ জন পড়ুয়া ওই কলেজ ছেড়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্ধকারে রেখেই ওই শূন্য আসনগুলিতে পরবর্তী সময়ে বাইরে থেকে ছাত্রদের ভর্তি নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “নিয়ম অনুযায়ী আসন শূন্য হলে মেধা তালিকায় অপেক্ষারত ছাত্রদের ভর্তি করতে হয়। সেই বিধি ভেঙে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের না জানিয়েই বাইরে থেকে ছাত্র ভর্তি করেছেন।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, হলধর মাহাতো টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এ বার শুরু হওয়ায় তাদের অনুমোদন পেতে কিছুটা দেরি হয়। তাই অন্যত্র কলেজগুলিতে ছাত্র ভর্তি যখন শেষের দিকে, তখন এই কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় দু’দফায় ছাত্রদের নাম পাঠিয়েছিল ওই কলেজে। ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষা সংসদ বেসরকারি কলেজগুলির কাছে তাদের দেওয়া ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ রয়েছে কি না, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে বলে। নচিকেতাবাবু বলেন, “ওই দুই কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ওই সার্টিফিকেট দেখাতে পারেনি। তাই বোরোর ওই কলেজে তৃতীয় দফায় ছাত্র পাঠানো স্থগিত রাখা হয়। এর পরে তারা ওই সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু তত দিনে বাকি ছাত্রদের পাঠালে তারা নিয়ম অনুযায়ী ২০০ দিন ক্লাস করতে পারত না।” তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের নাম না পাঠানো সত্ত্বেও ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই শূন্য আসনগুলিতে ৩৬ জনকে ভর্তি করেন। তাই ওই ছাত্রদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে।
সমস্যা সমাধানে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন বলে দাবি দেবেন মাহাতো স্মৃতি কলেজের কর্মকর্তা জগদীশ মাহাতো এবং বোরোর কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অমল মাহাতোর। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই বাড়তি ছাত্র ভর্তি করা হয়েছিল। ছাত্রদের ভবিষ্যত যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য ওঁদের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি।’’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে, পরীক্ষায় কাকে বসতে দেওয়া হবে বা হবে না, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্বাধিকার আছেই। তা-ও আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখব।” |