একদিকে বিপজ্জনক ভবন, অন্যদিকে স্থানাভাব। বিদ্যালয়ে নেই পানীয় জলের নলকূপও। এমন অবস্থাতেই চরম সমস্যার মধ্যে দিয়ে পঠনপাঠন চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ শিবগঞ্জ রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত বছর ঝড়ে ভেঙে গিয়েছিল স্কুলের দোচালা টালির ছাউনির একদিকের চাল। ফলে সেখানে ক্লাস করা সম্ভব না হওয়ায় সরকারি অনুদানে তৈরি একটি মাত্র পাকাঘরেই গাদাগাদি করে কোনওরকমে চলছে পঠনপাঠন। সমস্যা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।
১৯৬৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন পায়। ইটের দেওয়ালের দোচালা টালির ছাউনির ঘরে শুরু হয় প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ৯৪ জন। শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। পুরনো বাড়িটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় কাঠের কড়ি-বরগাগুলির অবস্থা এমনিতেই বেহাল ছিল। ২০১০ সালে ঝড়ে স্কুলের টালির ছাউনি ভেঙে যায়। তার পর থেকে একটি মাত্র পাকা ঘরেই ক্লাস চলে আসছে। কিন্তু ভাঙা চাউনি আর সারাই হয়নি। এই অবস্থায় স্বল্প পরিসরের একটি ঘরে এতজন পড়ুয়াকে একসঙ্গে সামলাতে স্বাভাবিকভাবেই হিমশিম খেতে হয় শিক্ষকদের। |
কিন্তু ভাঙা ছাউনি সংস্কারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তন্ময় মান্না বলেন, “বিদ্যালয় সংস্কারের জন্যে প্রশাসনের কাছে বহুবার অর্থসাহায্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। ফলে চরম সমস্যার মধ্যে দিয়েই স্কুল চালাতে হচ্ছে।” বিদ্যালয়ের গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি গৌরহরি মাইতি বলেন, “টানা ঝড়বৃষ্টি হলে অনেক সময় ছুটি ঘোষণা করে দিতে হয়। ভাঙা ছাউনির যা অবস্থা তাতে চাল ভেঙে পড়ে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
অভিভাবকদেরও বক্তব্য, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন না তাঁরা। কারণ ওই স্কুল কোনওমতেই নিরাপদ মনে হয় না তাঁদের কাছে। বাধ্য হয়ে অনেকে তাঁদের ছেলেমেয়েকে এই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন।
পাথরপ্রতিমা চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক ললিত মহাজন বলেন, “ওই বিদ্যালয়ের সমস্যার বিষয়ে আমাকে জানানোর পর আমি জেলা শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি। ওই বিদ্যালয়ে নলকূপ বসানোর অনুমোদন হয়েছে। তবে সংস্কারের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।” পাথরপ্রতিমার বিডিও অচিন্ত্য হাজরা বলেন, “ওই বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের তহবিলে নেই। জেলা প্রকল্প আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” যদিও জেলা প্রকল্প আধিকারিক সুজিত মাইতি বলেন, “আমি ওই স্কুলের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে ছবি-সহ আবেদন করলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।” |