লাল-হলুদ ‘মহাসেন’-এ বিধ্বস্ত ইয়াঙ্গন
ইস্টবেঙ্গল ৫ (পেন, চিডি-হ্যাটট্রিক, মেহতাব)
ইয়াঙ্গন ইউ: ১ (সিজার)
সুভাষ ভৌমিক ম্যাচটা দেখেননি। কিন্তু শুরুতেই পেন ওরজির অসাধারণ গোলটার পর ট্রেভর জেমস মর্গ্যান যে দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুললেন, যুবভারতীর ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সে দিকটা নিউ আলিপুর!
নয় বছর আগে তাঁর গড়ে যাওয়া রেকর্ড স্পর্শ করেছেন মর্গ্যান, শোনার পর সুভাষের প্রতিক্রিয়াও বেশ ইঙ্গিতবাহী। কাউকে আলাদা কৃত্বিত্ব না দিয়ে আই লিগ জয়ী চার্চিল কোচের মন্তব্য “ভারতের যে কোনও দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পেলেই গৌরবান্বিত বোধ করি।”
উইম কোভারম্যান্সও ম্যাচটা দেখেননি। দেখলে জাতীয় কোচের জ্বালা হয়তো কিছুটা জুড়োত। মায়ানমারের কাছে হেরেই দু’মাস আগে এ এফ সি চ্যালেঞ্জার্স কাপে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। ডাচ কোচকে এ দিন ফোনে ধরা যায়নি। কিন্তু তাঁর সেই দলের অন্যতম স্তম্ভ মেহতাব হোসেন ম্যাচের পর কিন্তু বলে গেলেন, “সে দিন যে মায়ানমারের কাছে হেরেছিলাম, সেই দলের সাত জন আজ খেলল আমাদের বিরুদ্ধে। ওদের পাঁচ গোল দিতে পেরে যন্ত্রণা কিছুটা কমল। স্বস্ত্বিও পাচ্ছি।”
কোভারম্যান্সের দলের হারের বদলা। ২০০৪-এ করা সুভাষ ভৌমিকের কৃতিত্বে ভাগ বসানোবুধবার যুবভারতীতে একই সঙ্গে দুটো চমকপ্রদ ঘটনা ঘটানোর পর ইস্টবেঙ্গলের সাহেব কোচকে দেখে মনে হচ্ছিল বিশ্বের তৃপ্ততম মানুষ। “অবিশ্বাস্য জয়। অনেক সমালোচনার জবাব আছে এই জয়ে। অনেকেই তো বলেছিল ফিটনেস ট্রেনিং ঠিক মতো হয়নি টিমের।” বলে দিলেন ক্লাব ছাড়তে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ।

হ্যাটট্রিকের হুঙ্কার। বুধবার যুবভারতীতে এডে চিডি। ছবি: উৎপল সরকার
আই লিগ জয়ের ব্যর্থতার ক্ষতে প্রলেপ হয়তো এই জয়ে পড়ে নি। কিন্তু লাল-হলুদ আর্কাইভে চিরকালীন নাম উঠে গেল মর্গ্যানের। বিপক্ষ ইয়াঙ্গন ইউনাইটেড এ দিন যতই হামাগুড়ি দিক, ফুটবল ইতিহাসের গবেষক কোনও ছাত্রের কাছে দুটি ‘রসদ’ কিন্তু মজুত হয়ে রইল।
অপরাজিত থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গল।
এএফসি কাপ চালু হওয়ার পর কোনও ভারতীয় ক্লাব প্রথমবার ৫-১ জিতল। শুধু তাই নয়, হ্যাটট্রিকও করলেন কোনও ফুটবলার।
বুধবারের ম্যাচটা রাতের আলোয় না হয়ে দুপুরের কাঠফাটা গরমে হলে কী হত? গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে দেখতে বিকাশ পাঁজি উত্তর দিলেন, “আট-দশ গোল হতই। এটা কোনও টিমই না। আমরা কত ভাল ভাল টিমের সঙ্গে খেলেছি।” বিদেশি দলগুলির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের ট্র্যাক রেকর্ড চমকে দেওয়ার মতো। বিকাশ সেই রেকর্ডের সারণীতে হেঁটেছেন। তাঁর ঠোট উল্টোনো আফসোস থাকবেই!
কিন্তু ইস্টবেঙ্গল এরকম একটা গৌরব ছোঁয়ার ম্যাচ খেলছে, মাঠে লাল-হলুদ সমর্থক কই! মেরেকেটে হাজার পাঁচেক এসেছিলেন খেলা দেখতে। বাংলার দর্শক এখনও যে সেই কলকাতা লিগ, ফেড কাপ, আই লিগের বাইরে ভাবেন না সেটা আরও একবার প্রমানিত। আন্তর্জাতিক সাফল্যের স্বাদ নিতে শেখেননি ওঁরা। কি আর করা যাবে?
দুপুর থেকেই আবহাওয়া দফতর থেকে ঘোষণা করা হচ্ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারেও ঘুর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ যে কোনও মুহূর্তে আছড়ে পড়বে। কিন্তু কি লিন-জারিনিদের দেশে সেটা শুরু হওয়ার অনেক আগেই তা যে সল্টলেকে ‘অন্য মহাসেন’ হয়ে আছড়ে পড়বে তা ভাবেননি কেউই। চিডি-মেহতাব-পেনদের তৈরি লাল-হলুদ ‘মহাসেন’ কিন্তু দুমড়ে মুচড়ে দিল ইয়াঙ্গন ইউনাইটেডের সব প্রতিরোধ। দেড় মিনিটে পেনের গোল দিয়ে যা শুরু। শেষ ছিয়াত্তর মিনিটে চিডির হ্যটট্রিকে। ইয়াঙ্গনের বালগেরিয়ান কোচ ইভান কোলেভ সাংবাদিকদের সামনে এসে ব্যর্থতার কারণ হাতড়াচ্ছিলেন। “এই দল নিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না। আমার নিয়মিত চার ডিফেন্ডারের মাত্র একজন খেলল।”

‘‘এখনও একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছি। একে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছি।
তারওপর এই হ্যাটট্রিক। আমার খেলোয়াড় জীবনের সেরা প্রাপ্তি।’’

ইয়াঙ্গনের সব ফুটবলার যদি খেলতেন, তা হলেও কি ফলের কোনও পরিবর্তন হত? মনে হয় না। ইস্টবেঙ্গল শেষ কবে এত নিখুঁত ফুটবল খেলেছে মনে করা যাচ্ছে না। মাটিতে বল রেখে নির্ভুল পাস খেলা, নিখুঁত উইং প্লে, চিডি-পেনদের জায়গা বদল করে বিপক্ষকে ধাঁধায় ফেলে দেওয়া, টিম গেমকবে দেখা গেছে লাল-হলুদে! আন্তর্জাতিক ম্যাচে হ্যাটট্রিক। সে-ও তো হয়েছিল কুড়ি বছর আগে। কার্লটন চ্যাপম্যান করেছিলেন কাপ উইনার্স কাপে। চিডি সেটাও তো করলেন। চিডি-পেনের যুগলবন্দির পাশে মেহতাব হোসেনকে দেখে মনে হচ্ছিল বাড়তি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নেমেছেন।
শেষের দশ মিনিট ছাড়া ইয়াঙ্গনের কার্যত কোনও কামড়ই ছিল না। তাদের দুই বিদেশি স্ট্রাইকার সিজার আর কোনেদেশের মাটিতে যত গোলই করে আসুন, লাল-হলুদ রক্ষণকে সেভাবে বিপদেই ফেলতে পারেননি। ইয়াঙ্গনের মাঝমাঠের দাপটও উধাও হয়ে গিয়েছিল লালরিন্দিকা-ইসফাকদের দৌড়ে।
“কে বলেছে এই টিমটা সেমিফাইনালে যেতে পারবে না।” বিষন্ন গলায় বলছিলেন মর্গ্যান। কে যেন তাঁকে প্রশ্ন করল, আরে আপনিই তো সেপ্টেম্বরের সেই ম্যাচটায় থাকছেন না। মর্গ্যান বললেন, “নো কমেন্টস।”

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা, ওপারা, অর্ণব, সৌমিক, মেহতাব, পেন, লালরিন্দিকা (সঞ্জু) ইসফাক, চিডি, বরিসিচ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.