|
|
|
|
|
ইউসুফকে বলব, ওহে ভাই
আইনের বই-টই একটু পড়ো
রাজু মুখোপাধ্যায় |
|
ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে আমার চার দিন বাদেই দেখা হবে! কাকতালীয় হয়তো। কিন্তু বুধবার ইউসুফের অদ্ভুত আউটের ধাক্কায় গত বারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর আইপিএল থেকে ছিটকে যাওয়ার পরের ম্যাচটাতেই আমি কিনা গৌতম গম্ভীরদের ম্যাচ রেফারি! রবিবার হায়দরাবাদে সানরাইজার্স-কেকেআর ম্যাচের টস আমিই করাব। আর ওখানে হোটেল বা মাঠে ইউসুফের সঙ্গে দেখা হলে রসিকতা করেই ওকে বলব, “ভাই, ক্রিকেট খেলার আইনের বইটা একটু পড়ো-টড়ো!”
আসলে এ দিন ইউটিউবে ইউসুফের ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউটটা দেখে ব্যাটসম্যানের জন্য খারাপই লাগল। দুর্ভাগ্যজনক আউট। কারণ, এ ধরনের আউটের ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসেই খুব কম। আইপিএলে তো বটেই, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই এই প্রথম। কিন্তু আমার আরও বেশি খারাপ লাগল, ইউসুফ এ ধরনের আউটের আইনটা না জানার জন্য। এটা আমি ওর সঙ্গে কথা না বলেই নিশ্চিত হয়ে লিখছি। আইন জানা থাকলে আম্পায়ার ওকে আউট দেওয়ার পর ও অতক্ষণ মাঠের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকত না। দাঁড়িয়ে থেকে ও কী বোঝাতে চাইছিল? আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত ভুল?
তা হলে ক্রিকেট খেলার আইনের ৩৭ নম্বর ধারাটা এখানে একটু আলোচনা করা দরকার। ওই ধারায় খুব পরিষ্কার করে লেখা আছেএকটা বল যতক্ষণ খেলার মধ্যে আছে (অর্থাৎ ডেডবল হয়নি), সেই সময় ব্যাটসম্যান সেই বলকে কোনও ভাবে স্পর্শ করতে পারবে না। ব্যাট দিয়ে নয়, হাত-পা, শরীরের কোনও অংশ দিয়েও নয়। ডেডবল না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু সেই বল ফিল্ডিং টিম দ্বারা ফিল্ড হতে পারে, সে কারণে ব্যাটসম্যান বলের পজিশনে পরিবর্তন ঘটালেই সেটা ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ কিংবা ‘হ্যান্ডল দ্য বল’ হবে। আর সেই আইনে ব্যাটসম্যান আউট ঘোষিত হবে।
ইউসুফ এ দিন কী করেছে? টিভির পর্দায় যতটুকু দেখলাম, বলটা খেলে ইউসুফ যখন রান নিতে দৌড়চ্ছে, বোলার পার্নেল নিজেই বলটা ধরার জন্য এগিয়ে গিয়েছিল। ফিল্ডার যাতে বলটা সহজে ধরতে না পারে সে জন্য ইউসুফ নন স্ট্রাইকার প্রান্তে দৌড়ে আসার সময় পা দিয়ে বলটা সরিয়ে দিল। পরিষ্কার ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট।
দেখে খুব ভাল লাগল, মাঠের দুই আম্পায়ার এর পর নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিয়ে গোটা ব্যাপারটা থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ায়। ইংল্যান্ডের নাইজেল লং আর ভারতের কে শ্রীনাথ দু’জনেই খুব ভাল আম্পায়ার। এ দিনের থার্ড আম্পায়ার বিনীত কুলকার্নিকে ম্যাচের ঘণ্টাখানেক পরে মোবাইলে ধরেছিলাম। ও আমাকে বলল, মাঠের আম্পায়াররা মোটেই ইউসুফ আউট কি আউট নয়, সেটা ওয়াকিটকিতে ওর কাছে জানতে চায়নি। তা হলে তো থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মাঠের জায়েন্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠত‘আউট’ অথবা ‘নট আউট’। কিন্তু নাইজেল আর শ্রীনাথ এক্ষেত্রে বিনীতের কাছে শুধু জানতে চেয়েছিল, বলে ইউসুফের পা লাগাটা অনিচ্ছাকৃত না ইচ্ছাকৃত? ওয়াকিটকিতে থার্ড আম্পায়ার ‘ইচ্ছাকৃত’ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঠের আম্পায়ার আঙুল তুলে ইউসুফকে আউট দিয়েছে। একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত।
আমি তো বরং বলব, আউট হয়েও মাঠে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য ইউসুফের ম্যাচ ফি-র কমপক্ষে কুড়ি শতাংশ জরিমানা করা উচিত এ দিনের ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলের। আমি হলে তো করতাম। গত বার আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মুনাফ পটেলকে একটা ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করার অপরাধে পঞ্চাশ শতাংশ জরিমানা করেছিলাম। প্রায় সাড়ে ন’লাখ টাকা। পরে দেখলাম, আইপিএল কমিটি এই বিনোদনের টুর্নামেন্টে এত কঠিন শাস্তি-টাস্তি ঠিক পছন্দ করছে না। সে জন্যই হয়তো এ বার গম্ভীর-কোহলির মধ্যে মাঠের মধ্যে অত কথাকাটাকাটির পরেও ডেভিড বুনের মতো ম্যাচ রেফারি দু’জনকে শুধু সতর্ক করেই ছেড়ে দিয়েছে। |
|
|
|
|
|