|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
হাসি ফেরত |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার দার্জিলিং সফরে। তাহাতে পাহাড় আবার হাসিতেছে কি না, পাহাড় জানে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সর্বাধিনায়ক বিমল গুরুঙ্গ হাসিতেছেন, সচিত্র প্রতিবেদনেই তাহা স্পষ্ট। মাত্র কিছু কাল আগেও অবশ্য কাহারও মুখেই এত হাসি ছিল না। বরং মনকষাকষি ছিল, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিস্তর ক্ষোভ ছিল, এমনকী হুমকি, হুঁশিয়ারিও ছিল। গোর্খা নেতৃত্বকে শায়েস্তা করিতে মমতা সে সময় লেপচা তাস খেলিয়াছিলেন, স্বশাসিত গোর্খা পরিষদকে এড়াইয়া লেপচাদের জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক স্বশাসনের প্রস্তাব ভাসাইয়াছিলেন। তাহাতেই মোর্চা নেতৃত্বের সহিত তাঁহার মনোমালিন্য সূচিত হয়। কিন্তু তাহার পর পাহাড় ও সমতল, উভয়ের পরিস্থিতিই দ্রুত পরিবর্তিত হইয়াছে। পরিবর্তনটি তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা গোর্খা মোর্চা কাহারও অনুকূল হয় নাই। এখন ‘সব শোধবোধ ঘরে চলো’র পালা।
সাম্প্রতিক কালে মোর্চা সমর্থকদের দলে দলে সুবাস ঘিসিংয়ের জি এন এল এফ-এ যোগদানের হিড়িক পড়িয়া গিয়াছে। দলে দলে স্বেচ্ছাসেবক গুরুঙ্গের মোর্চা ছাড়িয়া প্রতিদ্বন্দ্বী গোর্খা সংগঠনগুলিতে চলিয়া যাইতেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেও ঝুঁকিতে শুরু করিয়াছেন মোর্চার কিছু সমর্থক। উপরন্তু নবগঠিত আঞ্চলিক প্রশাসন রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ব্যতিরেকে কোনও উন্নয়নমূলক কাজকর্মই সে ভাবে করিতে পারিতেছে না। এই সব কারণেই মোর্চা নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান নমনীয় করিয়া রোশন গিরিকে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে কলিকাতায় পাঠান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ শেষে তাঁহাকে পাহাড়ে গিয়া গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণও জানানো হয়। আপসের উদ্যোগটি লক্ষণীয়।
মোর্চা নেতৃত্বের সহিত রফার তাগিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বড় কম নয়। সারদা কাণ্ডের জেরে সমগ্র রাজ্যে শাসক দলের প্রতি যে ক্ষোভ ও উষ্মা সঞ্চিত হইয়াছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পূর্বাহ্ণে তাহা ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হইতে পারে। দুই বছরের শাসনপর্বে ‘অর্জন’ বলিয়া দেখাইবার মতো বড় কিছু নাই। তাই একগুচ্ছ প্রকল্পের ডালি লইয়া মুখ্যমন্ত্রীর দার্জিলিং সফর। দুই তরফের রাজনৈতিক তাগিদই এই সফরের আশু প্রেরণা। এই ধরনের প্রেরণা সাময়িক রাজনৈতিক বোঝাপড়া তৈয়ারি করিতে পারে, উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা ইহার দ্বারা সহসা রূপায়িত হইবার নয়। মুখ্যমন্ত্রী বারংবার পাহাড়ের প্রতি তাঁহার ‘ভালবাসা’র কথা ব্যক্ত করিতেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হইবার পর অন্তত একুশ বার তাঁহার পাহাড় সফরের কথাও ফলাও করিয়া প্রচারিত হইতেছে। ব্যক্তিগত সংযোগ, পাহাড়বাসীর প্রয়োজন ও চাহিদা খতাইয়া দেখা এবং তদনুযায়ী প্রকল্প রচনা করা নিশ্চয় দরকারি। কিন্তু এই সংযোগ যদি ভঙ্গিসর্বস্ব হইয়া ওঠে, উন্নয়নের নীরব ও একনিষ্ঠ ব্রতপালন অপেক্ষা প্রতীকী হিতৈষণার সহাস্য বিজ্ঞাপন প্রচারের উপলক্ষ হইয়া ওঠে, তবে পাহাড়বাসীর তাহাতে কোনও স্থায়ী মঙ্গল নাই। |
|
|
|
|
|