রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বুক করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসবে ভর্তুকির টাকা। অর্থাৎ সিলিন্ডার যখন বাড়িতে পৌঁছবে, তখন পকেটের টাকার সঙ্গে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির টাকা মিলিয়েই সিলিন্ডারের দাম মেটানো যাবে।
১ জুন থেকে দেশের ২০টি জেলায় এই ব্যবস্থা চালু করছে কেন্দ্র। ধাপে ধাপে গোটা দেশে তা চালু হবে। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা নেই। এই ২০টি জেলার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দিল্লি, কলকাতার মতো মেট্রো শহরগুলিতে এই ব্যবস্থা চালু করার পথে হাঁটবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। এখন বছরে ন’টি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেয় সরকার। ভর্তুকি মূল্যে সিলিন্ডার পিছু ৪১০ টাকা দাম দিতে হয়। এই ন’টি সিলিন্ডারে সরকার ৪৩৫ টাকা করে ভর্তুকি দেয়। ন’টি সিলিন্ডারের পরে আরও সিলিন্ডার প্রয়োজন হলে বাড়তি ৪৩৫ টাকা গুনতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় প্রথম থেকেই পুরো দাম দিতে হবে। তবে তার আগে ভর্তুকির টাকা অ্যাকাউন্টে চলে আসবে।
দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষ রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। তাঁদের মধ্যে একটা বিরাট অংশের না আছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, না রয়েছে আধার-সংখ্যা। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের স্পষ্ট বক্তব্য, ভর্তুকি পেতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন আধার-সংখ্যা, কারণ তার ভিত্তিতেই ভর্তুকি দেওয়া হবে। আধার-সংখ্যাটি গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর ও ব্যাঙ্ককে জানাতে হবে। যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা আধার-সংখ্যা কোনওটাই নেই, তাঁদের অবিলম্বে তা তৈরি করে নিতে বলছে সরকার। এ জন্য প্রথম দফার ২০টি জেলার পাশাপাশি গোটা দেশ জুড়েই প্রচার চলবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী এম বীরাপ্পা মইলি বলেন, ওই সব জেলায় যাঁদের এখনও আধার-সংখ্যা বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁদের তিন মাস অতিরিক্ত সময় দেওয়া হচ্ছে।
সরাসরি নগদ হস্তান্তর বা ভর্তুকি হস্তান্তরকে লোকসভা ভোটে অন্যতম বিষয় করতে চাইছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই পেনশন, স্কলারশিপের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। ইউপিএ প্রচারের মন্ত্র ঠিক করেছে ‘আপকা পয়সা, আপকে হাত’। মইলির বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর নিজের এই প্রকল্পটি খুব প্রিয়। তাই সরকার জোরকদমে এগোতে চাইছে। মন্ত্রীর যুক্তি, এতে যে শুধু সাধারণ মানুষের লাভ হবে, তা-ই নয়। কালোবাজারি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়িতে রান্নার জন্য ভর্তুকি মূল্যে কেনা গ্যাসের সিলিন্ডার এখন আকছার রেস্তোরাঁ ও বাণিজ্যিক সংস্থায় ব্যবহার হয়। তা বন্ধ করা যাবে। গোটা দেশে এই ব্যবস্থা চালু হলে অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি সাশ্রয় হবে বলে মন্ত্রকের আশা। ভর্তুকির অপচয় বন্ধ রুখতে ইতিমধ্যেই ভুয়ো গ্রাহক চিহ্নিত করার কাজও শুরু করেছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক।
প্রথম দফায় যে ২০টি জেলায় এই সরাসরি ভর্তুকি হস্তান্তরের প্রকল্প চালু হচ্ছে, সেগুলি রয়েছে অন্ধ্র, দমন-দিউ, গোয়া, হিমাচল, কর্নাটক, কেরল, মহারাষ্ট্র, পুদুচেরি, পঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকেই বেছে নিচ্ছে? পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলেন, “যে সব জেলায় ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষের আধার-সংখ্যা তৈরি হয়েছে, সেই জেলাগুলিকেই প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।”
|