রান্নার গ্যাস বাবদ ভর্তুকি যত দ্রুত সম্ভব নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা কেন্দ্র শুরু করতে চায় বলে আজ জানিয়ে দিলেন পি চিদম্বরম। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, সরকারের লক্ষ্য হল, আধার কার্ডের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস বাবদ ভর্তুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু যাঁদের আধার কার্ড নেই, বা কার্ড থাকলেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করেননি, তাঁরাও এই ভর্তুকি পাবেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ভর্তুকির টাকাটা সরকার ডিলারকে দেবে। সে ক্ষেত্রে ওই গ্রাহক চলতি ব্যবস্থা অনুযায়ী ডিলারের থেকে ভর্তুকি মূল্যে সিলিন্ডার যেমন পাচ্ছেন, তেমনই পাবেন। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাই যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা আধার নম্বর পেয়ে যান, সে ব্যাপারে সচেষ্ট সরকার।
এর আগে রাজস্থান এবং অন্ধ্রপ্রদেশে নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়ার প্রকল্প চালু করলেও তা নিয়ে বিপুল সমস্যা তৈরি হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। সে কারণে এ বারে সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্র। চিদম্বরম জানান, এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। তিনি জানান, এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ১৪ কোটি রান্নার গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বহু সংযোগই ভুয়ো। চিদম্বরমের দাবি, নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা দেওয়া শুরু হলে ১৪ কোটি সংখ্যাটি এক ধাক্কায় অর্ধেকের কাছাকাছি নেমে আসবে। তাতে ভর্তুকি বাবদ সরকারের অনেক সাশ্রয় হবে। প্রথম ৯’টি সিলিন্ডারের টাকা আগাম দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। তবে সেটি একেবারে দেওয়া হবে না ধাপে ধাপে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলির সঙ্গে শীঘ্রই তিনি বৈঠক করবেন বলেও আজ জানান অর্থমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাঁর সচিবালয়ে নগদ হস্তান্তর প্রকল্প নিয়ে বৈঠক হয়। এই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করার পাশাপাশি দেশের আরও ৭৮টি জেলায় নগদ হস্তান্তর প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এ বার রান্নার গ্যাস বাবদ ভর্তুকি আধার কার্ড তথা আধার নম্বরের ভিত্তিতে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। দেশের বহু রাজ্য এবং এলাকার মানুষ এখনও আধার কার্ড পাননি। তাঁরা কী ভাবে ভর্তুকির টাকা পাবেন? চিদম্বরমের যুক্তি, একশো কুড়ি কোটি মানুষের দেশে নগদ হস্তান্তর প্রকল্প চালু হলে গোড়া থেকেই তা ত্রুটিমুক্ত হবে, এমন আশা করাই ভুল। নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তালিকা তৈরি করে, তাতে বহু মানুষের নামই বাদ যায়। ভোটের দিন অনেকে বুথে গিয়ে জানতে পারেন যে, তাঁর নাম তালিকায় নেই। কিন্তু সে জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ হয় না। তাই নগদ হস্তান্তর প্রকল্পও থমকে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। চিদম্বরমের দাবি, এটা এমন একটা প্রকল্প, যেখানে প্রতি মুহূর্তে গ্রাহকের ডিজিটাইজড তালিকা ‘আপডেট’ করতে হবে। কারণ, জন্ম-মৃত্যুর কারণে গ্রাহকের তালিকায় যেমন নতুন নাম জুড়বে, তেমনই অনেক নাম বাদ যাবে। অর্থমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্প শুরু করতে গিয়ে গোড়ায় হয়তো দেখা যাবে, ৭০% আধার নম্বর পেয়েছেন এবং তা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে তাঁরা নগদ হস্তান্তরের সুযোগ পাবেন। বাকিরা বর্তমানে যে ভাবে ভর্তুকি পান সে ভাবেই পাবেন। তাই কেউই বঞ্চিত হবেন না। তবে ক্রমে সকলেই যাতে আধার কার্ড ও নম্বর পান, প্রত্যেকের যাতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকে, সেটা সুনিশ্চিত করবে সরকার। |