ভিত আলগা ভরসারই।
যে-জমিকে ভিত্তি করে প্রায় বন্ধ চার সংস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা, তা ব্যবহারের এক্তিয়ার আদৌ রাজ্য সরকারের আছে কি না, সে নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন জমির মালিকেরা।
ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (নিস্কো), লিলি বিস্কুট, নিও পাইপস এবং ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ এই চার প্রায় বন্ধ সংস্থাকে পাকাপাকি ভাবে গুটিয়ে ফেলে তাদের ১৫০ একর জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চায় রাজ্য। এ জন্য কারখানা, বাড়ি ও তার লাগোয়া জমি খালি করার সময়ে ওই সরকারি সংস্থাগুলির কর্মীদের সাময়িক ভাবে লিলি বিস্কুটের জমিতেই ঠাঁই দিতে চায় তারা। কিন্তু ওই জমির মালিকদের অভিযোগ, জমির মালিকানা সরকারের নয়। এমনকী জমির লিজ বাবদ যে-সামান্য টাকা তাঁদের প্রাপ্য, টানা এগারো বছর তা-ও দেয়নি সরকার। তাই এই পরিস্থিতিতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না-করে ওই জমি ফের ব্যবহারের সরকারি সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই বৈধ নয় বলে মালিকদের দাবি।
বারাসত ও উল্টোডাঙায় লিলি বিস্কুটের দু’টি কারখানা রয়েছে। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যা কার্যত বন্ধ। হাজিরা খাতায় সই করা ছাড়া কর্মীদের কোনও কাজ নেই। থাকার মধ্যে উল্টোডাঙার কারখানায় রয়েছে ৭ বিঘা জমি। বারাসতে আছে ৩০ বিঘা। কিন্তু জমির মালিকানা সরকারের নয়। কারণ, গোড়া থেকেই তা লিজ নেওয়া ছিল। জমির মালিক শেঠ পরিবারের দাবি, বাজার দর অনুযায়ী উল্টোডাঙার ওই জমির দাম এখন কমপক্ষে ৪২ কোটি টাকা। বারাসতেও তা অন্তত ৯০ কোটি। অথচ এমন ‘দামি’ জমির মালিকানা থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে তাঁদের আয়ের পরিমাণ নগণ্য। তাঁদের অভিযোগ, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অনিয়মিত ভাবে হলেও লিজের টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু তার পর সেই ভাড়া দেওয়াও বন্ধ করে দেয় সরকার।
রাজ্য সরকারি সূত্রে অবশ্য দাবি, ১৯৯০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত লিজের টাকা গত বছরই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার চায় তা একেবারে ২০১৩ সাল পর্যন্তই চুকিয়ে দিতে। কিন্তু সেই প্রস্তাব মানতে নারাজ শেঠ পরিবারের ৩৪ জন শরিক। তাঁদের অভিযোগ, এখনও সেই ১৯৬৫ সালের বাজার দর অনুযায়ীই লিজের টাকা ধার্য করা রয়েছে। উল্টোডাঙায় মাসে ১২,৫০০ টাকা। আর বারাসতে ৬০০০। তাঁদের প্রশ্ন, সরকার যেখানে বেসরকারি শিল্পকে বাজার দরে সরাসরি জমি কেনার পরামর্শ দিচ্ছে, সেখানে তারা নিজেরা বাজার দরে জমি লিজের টাকা দেবে না কেন?
এ বার নিজেদের জমি লিজ সংক্রান্ত হিসাব বুঝে নিতে শিল্প পুনর্গঠন দফতরকে চিঠি দিচ্ছে শেঠ পরিবার। তবে আইনি জটিলতায় যাওয়ার বদলে বরং আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের প্রাপ্য পেতে আগ্রহী তাঁরা। সংশ্লিষ্ট দফতরের অবশ্য দাবি, এ বিষয়ে শেঠ পরিবারকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে লিলি বিস্কুট কোম্পানি তৈরি করেন প্রতাপ চন্দ্র শেঠ ও বিনয় কৃষ্ণ শেঠ। পারিবারিক এই ব্যবসার রমরমা টিকে ছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ১৯৬৭-’৬৮ সালে বদলে যাওয়া কর-কাঠামো থেকেই সংস্থার সমস্যার সূত্রপাত। ওই একই সময়ে চড়া দামে বিদেশ থেকে স্বয়ংক্রিয় মেশিনও আনে সংস্থা। যার ফলে বড়সড় আর্থিক বোঝা চেপে বসে ঘাড়ে। ব্যাহত হতে থাকে উত্পাদন। এর জেরে ১৯৭৯ সাল থেকে সংস্থা পরিচালনার রাশ হারায় শেঠ পরিবার। প্রথমে কেন্দ্র এবং তার পর রাজ্য সরকার রুগ্ণ হয়ে পড়া সংস্থাটি চালানোর দায়িত্ব নেয়। তবে প্রতিযোগিতায় যুঝে নতুন করে বাজার ধরা আর সম্ভব হয়নি। গত দশ বছরেরও বেশি সময় প্রায় বন্ধ উত্পাদন। পড়ে রয়েছে জার্মানি থেকে আমদানি করা মেশিনপত্র। এত কিছুর পর সংস্থার জমিটুকু ব্যবহারের যে-পরিকল্পনা রাজ্য সরকার করছিল, এ বার সমস্যা দেখা দিল সেখানেও। |