একটি লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করলেন কালনার এক বাসিন্দা। বুধবার কালনা থানায় আনন্দপ্রসাদ সিংহরায় নামে ওই ব্যক্তি ‘কেকেএন’ সংস্থার কর্ণধার কৌশিককুমার নাথের বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারখানা গড়ার জন্য কম দামে জমি কেনা এবং শেষে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
কালনার সূর্যপুর গ্রামের আনন্দপ্রসাদবাবু অভিযোগ করেন, স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০০৯ সালে এলাকার সাতগোড়িয়ায় তাঁর চার বিঘা জমি বিক্রি করার প্রস্তাব পান তিনি। ওই ব্যক্তি তাঁকে জানান, কলকাতার এক ব্যবসায়ী চালকল ও তেলকল গড়ার জন্য জমি কিনবেন। জমির দামের পাশাপাশি পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ২০১০-এর এপ্রিলে জমির দাম মিটিয়ে দেওয়া হয়। আনন্দপ্রসাদবাবু জানান, জমি হস্তান্তরের আগে সরকারি স্ট্যাম্প পেপারে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাতে কৌশিকবাবু সই ছিল। |
আনন্দপ্রসাদবাবু অভিযোগ করেন, চাররি পাওয়ার আশ্বাসে তাঁর মতো অনেকেই বাজারদরের তুলনায় কম দামে জমি বিক্রি করেন। কারখানা গড়ার কাজও শুরু হয়। কিন্তু চাকরি আর মেলেনি। গত বছর আচমকা কারখানার যন্ত্রপাতি রাতের অন্ধকারে বের করে নিয়ে যায় সংস্থার লোকজন। আনন্দপ্রসাদবাবুর দাবি, “রাস্তার পাশে যে জমির বাজারদর বিঘা প্রতি দশ লক্ষ টাকা, চাকরির আশায় তা ৩ লক্ষ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। আমার মতো অনেকেই তা করেছিলেন। কিন্তু কারখানা চালু হয়নি, চাকরিও মেলেনি। এখন আমরা জমি ফেরতের আশায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।”
সাতগোড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে প্রায় পঞ্চাশ বিঘা জমিতে তৈরি হয়েছিল দু’টি কারখানা। কিন্তু এখন ৬০ ফুটের একটি কংক্রিটের চিমনি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। চিমনির গায়ে লেখা রয়েছে সংস্থার নাম। বাকি এলাকা যেন ধ্বংসস্তূপ। পাঁচিলের ইট, লোহার জিনিসপত্র চুরি করে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১০ সাল থেকে দ্রুত গতিতে চালকল ও তেলকল গড়া শুরু হয়েছিল। আনা হয়েছিল নানা রকম যন্ত্রপাতি। ভিতরে নানা রকম ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। এলাকার বাসিন্দা উত্তম পালের দাবি, শুধু সূর্যপুর নয়, আটঘড়িয়া ও সাতগোড়িয়ারও অনেকে জমি দেন। তিনি নিজেও জমি বিক্রি করেছিলেন। যাঁরা বেশি জমি বিক্রি করেন তাঁদেরই চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চাকরি না মেলায় তাঁদের হতাশা বাড়তে থাকে। উত্তমবাবু অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে সংস্থার লোকজন পালিয়ে যান। বারবার সংস্থার কলকাতা অফিসে চিঠি পাঠিয়েও সুরাহা হয়নি। নিজেকে জমিদাতা দাবি করে তপন মণ্ডল নামে আর এক বাসিন্দা দাবি করেন, সংস্থার লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পরে অবাধে লুঠতরাজ শুরু হওয়ায় কারখানায়। এখনও তা চলছে।
কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি চাল জানান, সাতগোড়িয়া এলাকায় চালকল ও তেলকল গড়ার জন্য কোনও সংস্থা তাঁদের কাছে অনুমতি নেয়নি। তাঁর দাবি, বেআইনি ভাবে সংস্থাটি নির্মাণকাজ করছে, তা বছর দুয়েক আগে বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানানো হয়েছিল। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর তদন্ত করে দেখে, কারখানা যেখানে গড়া হয়েছে, সেখানে খানিকটা খাসজমিও রয়েছে। ওই দফতরের তরফে মালিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করা হয়।
কালনা থানা জানায়, ইতিমধ্যে ১২ মে যাদবপুর থানার পুলিশ কৌশিকবাবুকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
|