নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
নতুন মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার আসানসোল মহকুমাশাসকের পদ ছাড়ছেন শিল্পা গৌরীসারিয়া। স্টেট হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের কলকাতা কার্যালয়ে অধিকর্তা (অর্থ) পদে বদলি করা হয়েছে তাঁকে। অমিতাভবাবু আসছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপ-অধিকর্তা (ডিআরডিসি) পদ ছেড়ে।
পাশের জেলা হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) হিসেবে যাচ্ছেন দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষারানি আহমেদও। তাঁর জায়গায় নতুন মহকুমাশাসক হচ্ছেন কস্তুরী সেনগুপ্ত। এত দিন তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার ডিস্ট্রিক্ট ওয়েলফেয়ার অফিসের প্রজেক্ট অফিসার পদে ছিলেন।
এই সবই ‘রুটিন বদলি’ বলে প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হলেও শিল্পা গৌরীসারিয়ার বদলির রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল বলে সন্দেহের বাতাবরণও তৈরি হয়েছে। ঘটনাচক্রে, আসানসোলের প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়ন্ত আইকতকে সরানোর সময়েও একই অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সমাবেশে অব্যবস্থা প্রকাশ্যে আসার পরেই তাঁকে কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়। তার আগে জয়ন্তবাবু আসানসোল পুরসভার কমিশনারের দায়িত্বও সামলাতেন। তাঁর অপসারণের পরে তৎকালীন মহকুমাশাসক শিল্পা গৌরীসারিয়াকে ওই পদে বসানো হয়।
এই পুর কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জয়ন্তবাবুর মতো শিল্পাদেবীও কিছু তৃণমূল নেতার চক্ষুশূল হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি পুরসভার দরপত্র ডাকা-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে শাসকপক্ষের একাধিক কাউন্সিলরের ঠান্ডা লড়াই বাধে। পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি এমনও অভিযোগ তুলেছিলেন যে, কমিশনারের হস্তক্ষেপে একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাধা পাচ্ছে। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে ‘সরকারের ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি জেলাশাসকের হস্তক্ষেপও দাবি করেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। গত ১১ মে আসানসোলে সরকারি কর্মসূচিতে আসা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও বিষয়টি জানানো হয়। যদিও মন্ত্রী তখনই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এই ঘটনার তিন দিনের মধ্যে মহকুমাশাসকের বদলির কথা প্রকাশ্যে আসায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে। তবে শিল্পাদেবী এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কাছে জিতেন্দ্র তিওয়ারির দরবার প্রসঙ্গে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “এই ধরনের অভিযোগের কোনও মানেই হয় না। পুরসভার কোনও কিছুই দেখার দায়িত্ব আমার নয়।” পুর কমিশনার সব কাজই আইন মোতাবেক করেছেন জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, আসানসোল ও দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক-সহ ২০০৯ সালের আইএএস ব্যাচের মোট চার জনে পদোন্নতি ঘটিয়ে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই ‘রুটিন বদলি’। তবে আসানসোলের নতুন মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসকে আসানসোল পুর কমিশনারের পদে বসানো হচ্ছে না। ওই পদটি আপাতত শূন্যই থাকছে। |