অভিযোগ প্রতারণার
অন্যকে ভালবাসি, কবুল করেই গ্রেফতার নববধূ
রিবি বড় বালাই।
গরিব বাবা-মায়ের মুখ চেয়েই বেকার প্রেমিককে ছেড়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন এক কলেজ ছাত্রী। কিন্তু ফুলশয্যার রাতে আর পারেননি। ঘরের দরজা বন্ধ হতেই নতুন বরকে জানিয়ে দেন নিজের ভালবাসার কথা।
দেখতে-শুনতে ভাল মেয়েটিকে ‘বিনা পণে’ বিয়ে করেছিলেন পানাগড়ের ঠিকাদার সংস্থার কর্মী। তাঁর মুখে অন্যকে ভালবাসার কথা শুনে বাড়ির সবাই খেপে ওঠে। বুধবার সকালেই ছেলের বাবা সোজা পুলিশে চলে যান। তাঁদের দাবি, বিয়েতে খরচ হওয়া লাখ দেড়েক টাকা মেয়ের বাবাকে মেটাতে হবে। কনের সব্জি ব্যবসায়ী বাবা তা জোগাড় করতে না পারায় প্রতারণা এবং মানহানির অভিযোগে পুলিশ বাবা আর মেয়েকে গ্রেফতার করে।
ভালবাসা লুকিয়ে অন্যকে বিয়ে করা কি প্রতারণা? বর্ধমানের সরকারি আইনজীবী সুব্রতকুমার হাটির মতে, “কাউকে ঠকিয়ে কিছু আদায় করাই প্রতারণা। প্রেম গোপন করা সাধারণত তার মধ্যে পড়ে না। এ ক্ষেত্রে যদি বা মেয়েটিকে অভিযুক্ত করাও যায়, তারা বাবাকে অপরাধী করার মানে হয় না। তিনি হয়তো মেয়েকে বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছিলেন। মেয়ে যদি পরে বেঁকে বসে, তাঁর কী দোষ?” এ দিন দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক অবশ্য দু’জনেরই জামিন মঞ্জুর করেছেন। যাঁর জন্য এত বড় ঝুঁকি নিলেন তরুণী, সেই যুবক জানান, সংসার গড়ার জন্য তিনি যথাসাধ্য করবেন।
বর্ধমানের মানকর কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রীটির বাড়ি মানকরেই। শনিবার পানাগড় বাজার রথতলা এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীর ছেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কনে যে একটু মনমরা, তা বোধহয় কারও চোখে পড়েনি। সোমবার রাতে ফুলশয্যায় তিনিই স্বামীর কাছে ভেঙে পড়েন। কিন্তু তিনি তো আর ‘হম দিল দে চুকে সনম’-এর ঐশ্বর্যা নন। উল্টো দিকে বসে নেই অজয় দেবগণও, যে নববধূ অন্যের প্রেমাস্পদ শুনে দুনিয়া ঢুঁড়ে তাকে প্রেমিক সলমানের কাছে নিয়ে গিয়ে হাজির করবে।
রাতেই হইচই বেধে যায়। সবাই চেপে ধরেন কনেকে কেন তিনি আগে এ কথা বলেননি? পরিবারের তো মানসম্মান গেল! মঙ্গলবার সকালে লোক জানাজানি হলে পুলিশ এসে কনে ও তাঁর এক আত্মীয়াকে কাঁকসা থানায় নিয়ে যায়। হাজির হন বরের বাড়ির লোকজনও। বরের বাবা বলেন, “তিন মাস ধরে কথাবার্তার পরে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিচ্ছু জানতে পারিনি। মেয়ের বাবা-মা কিন্তু সব জানতেন। প্রতারণা করা হয়েছে।” পাত্র বলেন, “পণ নিইনি। পকেটের টাকা এবং কিছুটা ধার করে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছিলাম। তার বিনিময়ে মানসম্মান গেল।”
পুলিশ কনের বাড়ির লোকজনকে ডেকে পাঠায়। কিন্তু মেয়ের বাবা বলেন, “লোকের কাছে হাত পেতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। কী করে টাকা ফেরত দেব?” মেয়ের প্রেমের কথা জানতেন না বলেও তাঁর দাবি। যদিও তরুণী জানান, আউশগ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বাবা-মা জানতেন। কিন্তু তিনি এখনও কিছু করেন না। এই অবস্থায় রোজগেরে পাত্র পেয়ে বাবা-মা তাঁকে অনেক বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করান। যুবকটি জানান, রোজগার না থাকায় তিনি এই বিয়ে রুখতে জোর করতে পারেননি।
মঙ্গলবার দিনভর দড়ি টানাটানির পরে বুধবার সকালে পাত্রপক্ষ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বাবা আর মেয়েকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর জন্য যে বিনা দোষে বরের বাড়ির সম্মান গেল, নিজেকে দায়ী করছেন? আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে চোখ নামিয়ে নেন তরুণী। আলতো করে ঘাড় নাড়েন হ্যাঁ।
তার পরেই নিচু গলায় বলেন, “বাবা-মায়ের মুখ চেয়ে অনেক চেষ্টা করেছিলাম। পারলাম না। ভালবাসার কাছে হেরে গেলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.