নামেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর ব্লকের সাউটিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগ টুকুই যা ভরসা রোগীদের।
১৯৭৫ সালে স্থানীয় এক পরিবারের দান করা জমিতে ছ’শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উদ্বোধন হয়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে হোমিওপ্যাথি ও এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ব্যবস্থা ছাড়াও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সদের আবাসন ছিল। তবে সবই এখন অতীত। এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছেন মাত্র দু’জন নার্স ও এক চিকিৎসক। তাও চিকিৎসক সপ্তাহে দু-তিন দিন আসেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স সবিতা দাস ও গায়ত্রী জানা বলেন, “প্রতিদিন গড়ে একশো জন রোগী আসেন। তাঁদের বসার বা দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকায় প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে হয়।” অথচ, মোহনপুর ব্লক তো বটেই, দাঁতন ১ ও ২ ব্লক এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশার একাংশের মানুষও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। |
গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এলাকার নির্বাচিত বিধায়ক ও সাংসদ সিপিআইয়ের। পাশের কেন্দ্রের বিধায়ক রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন ভেঙে পড়লেও ন্যূনতম বরাদ্দ জোটেনি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য। স্থানীয় বিধায়ক সিপিআইয়ের অরুণ মহাপাত্র বলেন, “আমাদের দলের বিধায়ক রঞ্জিৎ পাত্র, কানাইলাল ভৌমিক, নন্দগোপাল ভট্টাচার্যরা শরিক দলের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে বারবার দরবার করলেও বরাদ্দ জোটেনি।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের মোহনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক রমণীমোহন জানা বলেন, “ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থানগত কিছু সমস্যা থাকায় আশেপাশের লোকেরা ওখানে সহজে পৌঁছতে পারেন না। তারপরও দশ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।”
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সাল পর্যন্ত কোনও রকমে দু’একটি শয্যা চালু ছিল। তবে বর্তমানে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধুমাত্র বহির্বিভাগই চালু রয়েছে। ২০০১ সাল নাগাদ স্থানীয় একটি আশ্রমের মহারাজ তথা স্কুল শিক্ষক বেদানন্দ সরস্বতী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য একটি রান্নাঘর তৈরি করে দেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই রান্নাঘরেই চলত বহির্বিভাগ। তারপর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে থাকা গাছ বিক্রির টাকায় বহির্বিভাগের বর্তমান ঘরটি তৈরি হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক বীরেন বেরা বলেন, “আমাকে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও যেতে হয়। সেজন্য এলাকার মানুষের অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্যক্ত ঘরে চলছে নানা অসামাজিক কাজকর্ম। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে শুধু আশ্বাসই পেয়েছি।” সাউটিয়া গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা বেরা, পামেলি চন্দ, সোনালী জানারা বলেন, “শিশু, প্রসূতি ও বয়স্কদের কথা ভেবে অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বন্ধ শয্যা চালু করা উচিত। সামান্য কেটে গেলে বা সেলাইয়ের জন্যও আমাদের পনেরো কিলোমিটার দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রদীপ পাত্রের আশ্বাস, “আমাদের সরকার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা তৈরি করেছে।” যদিও “এমনটা জানা নেই” জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ত্রিদীপ দাসের। তিনি বলেন, “জেলা জুড়েই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট রয়েছে। তবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা উন্নত করার চেষ্টা চলছে।” |