পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক-অধ্যাপকরা নিজেদের বেতন সংক্রান্ত দাবিদাওয়ার ব্যাপারে যতটা ব্যগ্র এবং হিসেবি, শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য ততটা নন বলে মনে করেন প্রবীণ অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। তাঁর মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো বৃদ্ধি, গ্রন্থাগার-গবেষণাগারের উন্নতি সাধন নিয়ে শিক্ষকদের আরও বেশি করে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন আছে। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা) আয়োজিত শিক্ষা বিষয়ক একটি কনভেনশনে এই মত ব্যক্ত করেন সুকান্তবাবু।
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের নানা সমস্যা ছিল এ দিনের কনভেনশনে মুখ্য আলোচ্য বিষয়। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস-সহ অনেকে। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বর্ধিত বেতনের বকেয়া দেওয়া, পদোন্নতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি ইত্যাদি দাবিতে কর্মবিরতিও পালন করেছে ওয়েবকুটা। তাদেরই আয়োজিত কনভেনশনে সুকান্তবাবুর ওই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংগঠনের সদস্য শিক্ষকদেরই একাংশ।
৪০ বছর শিক্ষকতার পরে বছর তিনেক হল অবসর নিয়েছেন যাদবপুরের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্তবাবু। তাঁর কথায়, “শিক্ষকদের মধ্যে পঠনপাঠন, পাঠ্যক্রম, পরিকাঠামো ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা বছরে একটা হয় কি না সন্দেহ।” তুলনায় নিজেদের আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে কিন্তু তাঁরা অনেক বেশি সরব বলে সুকান্তবাবুর মত। তিনি চান, শিক্ষক-শিক্ষিকারা রীতিমতো গবেষণা করে পঠনপাঠনের উন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট দাবিতে সরব হোন, যে ভূমিকাটা নিতে তাঁদের কার্যত দেখা যায় না।
প্রবীণ অধ্যাপকদের মধ্যে অনেকে সুকান্তবাবুর সঙ্গে একমত, অনেকে নন। যেমন, এ রাজ্যে বামপন্থী শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা আশিস রায় বলেন, “আমরা কিন্তু শিক্ষার উন্নতি নিয়েও আন্দোলন করেছি। এ রকম সাধারণ ভাবে মন্তব্য করা ঠিক নয়।” রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারের বক্তব্য, “আর্থিক দাবিদাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দাবিও সুনির্দিষ্ট ভাবেই জানান শিক্ষকেরা। সুকান্তবাবুর নজরে হয়তো সেই দিকটা পড়েনি। তবে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবেন। উনি যা বলেছেন, তার গুরুত্ব রয়েছে।”
সুকান্তবাবুকে সরাসরি সমর্থন করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায়। তিনি বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা বরাবর আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে যত আগ্রহী, শিক্ষার উন্নতি নিয়ে ততটা আগ্রহ তাঁদের মধ্যে দেখা যায় না।” ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, “আমরা সুকান্তবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করি। আরও নির্দিষ্ট ভাবে নিজেদের দাবি জানাতে পারলে ভাল হয়। সংগঠনের রাজ্যস্তরের কনভেনশনে তেমনটাই করার চেষ্টা করা হবে।”
এ দিনের আলোচনাসভায় শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর উপরেও জোর দেন সুকান্তবাবু। তিনি বলেন, “ইউজিসি বা ওই রকম কোনও সংস্থা কোথাও একটা গাণিতিক উপায়ে শিক্ষকদের কাজের মূল্যায়নের চাপ না দিলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সচেতন হচ্ছেন না। এটা দুঃখের।” শিক্ষামন্ত্রীও বলেন, ছেলেমেয়েদের ক্লাসমুখী করা, তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা ইত্যাদির দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। এ বিষয়ে একমত সুরঞ্জনবাবু। তাঁর কথায়, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা নানা রকম দাবি রাখবেন, অথচ নিজেদের দায়বদ্ধতা পালন করবেন না, তা হবে না।” |