ঘোর বর্ষার মধ্যেই হতে চলেছে পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বৃষ্টি-বাদলার চরিত্র বলছে ভোট-পর্ব একেবারে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা কমই।
হাইকোর্টের নির্দেশ, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্যে ভোট করতে হবে। তা মেনে নিলেও জুনের শেষ বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের আগে রাজ্যে ভোট নেওয়া যাবে না। রাজ্য সরকারের আশঙ্কা, এই বিশাল কর্মকাণ্ডে বর্ষা ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গলায় মঙ্গলবারেও এই আশঙ্কার সুর শোনা গিয়েছে।
কিন্তু সত্যিই কি বর্ষা ভাসিয়ে দিতে পারে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে?
স্বাভাবিক নিয়মে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুন। রাজ্যের বাকি অঞ্চলে ৮ জুন। ১০ বছরের রেকর্ড বলছে, ২০০৯ ছাড়া অন্য সব বারই বর্ষা এ রাজ্যে ঢুকেছে নির্দিষ্ট সময়ের পরে। ২০০৯-এ আয়লা গোটা পশ্চিমবঙ্গেই ২৫ মে বর্ষা এনে দিয়েছিল। |
তাই বর্ষার স্বাভাবিক নির্ঘণ্ট অনুযায়ী জুন মাসের শেষ কিংবা জুলাইয়ের গোড়া হল রাজ্যে ঘোর বর্ষার সময়। তবে আবহাওয়া দফতরের গত ১০-১৫ বছরের রেকর্ড অন্য কথা বলছে। এই তথ্য অনুযায়ী, জুনের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা ঢুকলেও, জুন-জুলাই মাসে উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স ছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাচ্ছে না রাজ্য। তাই পঞ্চায়েত ভোট ঘোর বর্ষার মধ্যে হলেও তাতে ভোট বানচালের আশঙ্কা দেখছেন না আবহবিদেরা। যদি না এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে কোনও গভীর নিম্নচাপ কিংবা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। ২০০৯ সালের মতো এ বছরেও বর্ষাকে এ রাজ্যে সাত তাড়াতাড়ি ঠেলে ঢোকানোর একটা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। আয়লার মতো ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ এ রকম একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে ‘মহাসেন’-এর গতিপ্রকৃতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তার ঝাঁঝ যেমন কমেছে, বদলেছে অভিমুখও। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “মঙ্গলবারের পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হচ্ছে মায়ানমার-বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে মহাসেন। এর ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে মাত্র। আয়লার মতো বর্ষাকে আগে ঢোকাতে পারবে না মহাসেন।” এ বছর সারা দেশে স্বাভাবিক বর্ষা হবে বলে জানিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। কিন্তু বর্ষার পাঁচ মাস সব জায়গায় একই পরিমাণ বৃষ্টি হবে কী না, তা জানাতে পারেননি আবহবিদেরা। গত কয়েক বছর বর্ষা ভুগিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের। জুন এবং জুলাই মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। অগস্টের মাঝামাঝি থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টি আবার ক্ষতি করেছে চাষের। এ বারেও সেই আশঙ্কা প্রবল বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।
এ বার বর্ষা কবে নাগাদ ঢুকবে পশ্চিমবঙ্গে? গোকুলবাবুর পূর্বাভাস, “বৃহস্পতিবারের মধ্যে বর্ষা ঢুকবে নিকোবরে। ২০ মে-র মধ্যে তা ঢোকার কথা আন্দামান দ্বীপে। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত বর্ষার গতি স্বাভাবিক।” আগামী সপ্তাহ খানেক মৌসুমি বায়ু এই ভাবে এগোতে থাকলে এ বার জুনের ৮-১০ তারিখের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকে পড়বে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। |