ছোট্ট থেকেই কথা বলতে না পারায় শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না পরিজনদের। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে সেই ছেলেই এখন ‘সোনার ছেলে’। ২০১৩ সালের বোবাদের জাতীয় প্রতিযোগিতায় চার-চারটি সোনা জিতেছেন জঙ্গলমহল গোয়ালতোড়ের শ্রীকৃষ্ণ মাহাতো। সাফল্যের জেরে সুযোগ মিলতে পারে অলিম্পিকেও। প্রসঙ্গত, এ বারের অলিম্পিক হবে বুলগেরিয়ার ‘সফিয়া’তে। ২৬ জুলাই থেকে ৪ অগষ্ট চলবে প্রতিযোগিতা। সেখানে সোনার জয়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে শ্রীকৃষ্ণের।
শ্রীকৃষ্ণের বয়স ১৯ বছর। পড়াশোনায় তেমন মেধা না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই বাবা ভরতবাবু লক্ষ্য করেছিলেন ছেলে ভাল ছুটতে পারে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দৌড় করাতেন। ক্রমশ মিলতে থাকে পুরস্কার। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্য ও জাতীয় স্তরের পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এর জেরে মহারাষ্ট্রের আওরাঙ্গবাদে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল গেমস অব দ্য ডেফ, ২০১৩’ প্রতিযোগিতায় সুযোগ মেলে। তার সদ্ব্যবহার করে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার এবং রিলে রেস প্রতিটিতেই প্রথম হয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ। |
গোয়ালতোড়ের শ্রীকৃষ্ণ মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র। |
স্বভাবতই এই সাফল্যে খুশি পরিজনেরা। অবশ্য শুরু হয়েছে দুশ্চিন্তাও। সংসারে এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। ভরতবাবুর কথায়, “ওকে একটা ভাল জুতোও কিনে দিতে পারি না। যারা ছুটছে তাদের পায়ে ৭-৮ হাজার টাকা দামের জুতো। আমি এক দেড় হাজার টাকার বেশি দিতেই পারি না। ছেলে বলে, ভাল জুতো হলে আরও জোরে দৌড়তে পারতাম। কিন্তু আমি কী আর করতে পারি!”
সমস্যা রয়েছে আরও। ফুড চার্ট অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদকে খাবার যোগান দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে শ্রীকৃষ্ণের পরিবারের পক্ষে। ইচ্ছে থাকলেও প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে পাঠানো যায়নি কৃষ্ণকে। কলকাতাতে চলছে প্রশিক্ষণ। ভরতবাবু নিজেই প্রায়ই বাড়ি থেকে চাল, ডাল বেঁধে নিয়ে চলে যান কলকাতায়। প্রথমে ফুটপাতে রাত কাটাতে হলেও পরে ছেলের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি বিনা পয়সায় থাকার জায়গা দিয়েছেন।
এত প্রতিকূলতার মধ্যেও অলিম্পিকে ছেলের সুযোগ মিললে পদক জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। তাঁর কথায়, “ওর খেলাধুলোয় প্রবল আগ্রহ। আমি সবসময় ওর পাশে আছি, থাকব। শ্রীকৃষ্ণ অলিম্পিকে সুযোগ পেলে প্রয়োজনে জমি বেচে প্রতিযোগিতায় যাব।” প্রশিক্ষক কল্যাণ চৌধুরি বলেন, “শ্রীকৃষ্ণর মধ্যে ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়ার সমস্ত গুণই আছে। সুযোগ পেলে ও নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে।”
|