আই লিগ শেষ, তবু সুভাষ ভৌমিকের পিছনে তাড়া করতে হচ্ছে আপনাকে?
সল্ট লেক স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার মুখে প্রশ্নটা শুনেই ক্ষিপ্ত সাহেব কোচ। “আবার বিতর্ক বাঁধাতে চাইছেন? কে কোথায় কবে কী করেছে তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।”
ইতিমধ্যেই মর্গ্যান সরকারি ভাবে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন ক্লাবকে। তা সত্ত্বেও বুধবার ইস্টবেঙ্গলের এএফসি কাপ প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের পর কোচকে শেষ বার অনুরোধ করবেন ঠিক করে রেখেছেন ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য। মর্গ্যান সিদ্ধান্তে অটল থাকলে জনা সাতেক বিদেশি কোচের জীবনপঞ্জি নিয়ে পরবর্তী লাল-হলুদ কোচ বাছতে বসবেন কর্তারা। ইদানীং ইস্টবেঙ্গলে তাঁর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন করলে চটে যাচ্ছেন মর্গ্যান। আই লিগ হাতছাড়া হওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন চার্চিল ব্রাদার্সের টিডি-র নাম শুনলে রাগ যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান রাগের ধার ধারে না। ফলে প্রশ্ন উঠছেই।
ন’বছর আগে সুভাষের কোচিংয়ে শেষ বার এএফসি কাপের শেষ আটে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল। যুবভারতীতে সেই ‘গৌরব’ ছোঁয়ার সুযোগ মর্গ্যান ব্রিগেডের সামনে। গ্রুপে অপরাজিত থেকে রেকর্ড গড়ে ফেলা মর্গ্যান এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। বললেন, “সব ম্যাচ জিততে চাই। কিন্তু প্রেক্ষাপট হিসাবে যদি জানতে চান তা হলে ইস্টবেঙ্গলে আমার কোচিং জীবনে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল জিতলে কিন্তু ভারতও গর্বিত হবে।” সামনে মায়ানমারের ইয়াঙ্গন ইউনাইটেড হলেও মেঘের আড়ালে যে চার্চিল টিডি মর্গ্যানের মরিয়া ভাব দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না।
|
বিদায় বেলায় বিষণ্ণ মর্গ্যান। মঙ্গলবার মেহতাবকে নিয়ে। ছবি: উৎপল সরকার |
সে জন্য কোনও অস্ত্রেই শান দিতে বাকি রাখছেন না ইস্টবেঙ্গল কোচ। মায়ানমারে তাঁর ‘বন্ধুর’ কাছ থেকে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জেনেছেন। সদস্য-সমর্থকদের অনুরোধ করেছেন, মাঠ ভরিয়ে আসতে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলছেন, “কাল আমার সোর্সকে ফোন করেছিলাম মায়ানমারে। খবর পেয়েছি ইয়াঙ্গন খুব ভাল দল। মানে কঠিন ম্যাচ হবে।”
ইয়াঙ্গন কতটা ভাল? শেষ আটে ওঠার জন্য তাদেরই বা কী অঙ্ক? প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গিয়ে তাদের বালগেরিয়ান কোচ ইভান কোলেভ বরং প্রশ্ন তুলছেন, এএফসি-র টুর্নামেন্ট ফর্ম্যাট নিয়েই। “সব রাউন্ডে হোম-অ্যাওয়ে হচ্ছে। শুধু প্রি-কোয়ার্টারেই একটাই ম্যাচ! তাও সেই একটাই ম্যাচ গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের হোম ম্যাচ হবে! এটা কী রকম সূচি?” মায়ানমার জাতীয় লিগের চার নম্বর দল সন্ধ্যা ছ’টায় অনুশীলন করল যুবভারতীতে। আজ ম্যাচও শুরু ঠিক ছ’টাতেই। দেশে অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে কোনে অ্যাডাম-সিজারদের। কলকাতার গরম নিয়েও কোলেভের টিম আতঙ্কিত নয়। কোচ কিছুতেই ভাঙতে চাইলেন না টিমের ফর্মেশন। উল্টে বললেন, “প্রথম এগারোর পাঁচ জন আসেনি এখানে। তিন জনের চোট। এক জন শৃঙ্খলা ভেঙেছিল। এক জনের কার্ড সমস্যা। আসার দু’দিন আগেও মায়ানমার লিগে খেলেছি।” কিন্তু ইয়াঙ্গন শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিন বিদেশি-সহ যাঁরা এসেছেন তাঁদের মধ্যে জাতীয় দলের ফুটবলার। মাঠে নেমে প্রতিপক্ষের সঠিক শক্তি যাচাইয়ে ধন্ধে পড়তেই পারে ইস্টবেঙ্গল।
তবে মর্গ্যানও এ দিন অনুশীলনে প্রথম দল দেখাতে চাননি। অধিনায়ক সঞ্জু প্রধানের ‘ক্ষোভ’ ছাড়া টিমে তেমন সমস্যাও নেই। বরং দেশ বনাম দেশ লড়াইও এই ম্যাচের আগে তাতাচ্ছে মেহতাবদের। কোভারম্যান্সের ভারত কিছু দিন আগেই এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে মায়ানমারের কাছে হারায়। “ওই হারটা আমাদের এখনও যন্ত্রণা দেয়। ইয়াঙ্গনকে হারাতে পারলে যন্ত্রণাটা হয়তো কিছুটা কমবে,” বললেন লাল-হলুদের জাতীয় মিডফিল্ডার মেহতাব।
পূর্বসূরির নজির ছোঁয়ার আহ্বান। জাতীয় দলের যন্ত্রণা ঘোচানোর মঞ্চ। ঘরের মাঠ সবই সাহেব কোচকে তাতিয়ে তোলার রসদ। মর্গ্যান কি পারবেন সুভাষকে ধরতে?
|
বুধবারে এএফসি কাপ (প্রি কোয়ার্টার)
ইস্টবেঙ্গল: ইয়াঙ্গন ইউনাইটেড (যুবভারতী, ৬-০০)। |