শেষ ছ’সপ্তাহ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় কেটে গেল। জীবনের ভাল দিনগুলো দেখতে দেখতে সরে যায়। কিন্তু খারাপ সময় শেষ হতে চায় না। নাইট রাইডার্সের সঙ্গে থাকা মানে অসাধারণ সুখানুভূতি। মনে হয় না, অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ক্রিকেটারদের দেখভাল এত ভাল হয়, যতটা কেকেআরে।
বেঙ্গালুরুর হারটা এখনও আমাদের প্লে অফের লড়াইয়ে রেখে দিল। এই মুহূর্তে কিংবদন্তি গল্ফার গ্যারি প্লেয়ারের কথা মনে পড়ছে। গ্যারি বলত, এমন কোনও আশায় থেকো না যে তোমার প্রতিপক্ষ গর্তে বল ফেলতে পারবে না। বরং তুমি নিজে গর্তে বল ফেলার ব্যাপারে বেশি করে মন দাও। তাই অন্য ম্যাচে কী হচ্ছে, না হচ্ছে সে সব নিয়ে ভাবতে চাই না। আমাদের ভাবতে হবে গ্রুপের বাকি ম্যাচে জেতার কথা। আপাতত যেমন ভাবছি, পুণেকে হারাতে হবে যে কোনও ভাবে। অন্য কিচ্ছু না।
এমনিতে অন্য এক গ্যারির কথাও খুব ভাবছি। গ্যারি কার্স্টেন। ও বলে দিয়েছে, আর দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ থাকবে না। অবাকই হয়েছি। তবে ওর সমস্যাটাও বুঝি। ক্রিকেট একজন পেশাদারের সব কিছু নিংড়ে নেয়। পরিবারের জন্য ছিটেফোঁটাও সময় থাকে না। তাই কেউ যদি ঠিক করে, ঢের হয়েছে, এ বার ঘরে ফিরতে হবে, তা হলে তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানোই কাজের কাজ। আমার আবেগও তাই কোচ গ্যারির সঙ্গে থাকছে। ওর জায়গায় থাকলে আমিও একই সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি জানি, এই পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ বাবার কথা। নিজের পরিবারের জন্য বছরের পর বছর সব ছেড়েছুড়ে তাদের বাইরে বাইরে থাকতে হয়। অন্য কোনও উপায় নেই। গ্যারির অবস্থা তো অত খারাপ না। ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়েও ওর দিব্যি চলে যাবে।
এখন কথা হচ্ছে, গ্যারি কি হঠাৎই এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিল? জানি না। তবে হঠাৎ নিলে আমি অন্তত অবাক হব। ক্রিকেট দুনিয়ায় ওর কাজের অভাব নেই। ঝুড়ি ঝুড়ি প্রস্তাব পড়ে থাকবেই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, ও আর সে সবের দিকে তাকাতে চায় না, বরং ছেলের হাত ধরে স্কুলে যাবে...প্যারেন্টস ডে-র মিটিংয়ে জাঁকিয়ে বসবে...এ সবই হয়তো এই মুহূর্তে ওর মনে ভিড় করে আছে। শুধু আশা করব ক্রিকেট কোনও দিনই ওর সার্ভিস থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে না। হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আমাদের জাতীয় দলের একজন পরামর্শদাতার ভূমিকায় দেখব গ্যারিকে।
কিন্তু আমি নিজে কী করব? পরের আইপিএলেও কি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি আমি? জানি না। বুঝতে পারছি না। শুধু এটা বলতে পারি, টুর্নামেন্টটার প্রতি ভালবাসা আজও অটুট। মনে হয় না এমন কিছু হবে যে আমি নিজেই খেলতে চাইব না। বরং উল্টোটাই হয়তো সত্যি। বিশেষ করে কেকেআরের সঙ্গেও থাকতে চাই। অবশ্য ‘নিলাম’ বলেও একটা বস্তু আছে...সেখানে কী হবে, কেউ বলতে পারে না। |