কেকেআর ড্রেসিংরুমে আমার অনেক বন্ধুর মধ্যে রায়ান টেন দুশখাতের সঙ্গে বন্ধুত্বটা নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। ওকে আমরা ডাকি টেন্ডো বলে। টিমে ও দারুণ জনপ্রিয়। আর সে দিন ইডেনে একটা ব্যানারে লেখা দেখলাম টেন্ডো নাকি মহিলা মহলেও ভীষণ জনপ্রিয়!
টেন্ডোর অবশ্য আরও অনেক গুণপনা আছে। ওকে দেখলে মনে হবে ওর মনের ভেতর যেন অফুরান প্রশান্তি। সব সময় মুখে হাসি লেগে আছে। টেন্ডো সেই গোত্রের ক্রিকেটার যারা বেড়াতে ভালবাসে। নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। বই পড়তে ভীষণ ভালবাসে। এবং টিমমেট হিসাবে আমি দেখে গর্বিত যে, টেন্ডো ব্যাটটাও ভাল করছে। টাচ উড! কারও যেন কুনজর না পড়ে!
টেন্ডোর বই পড়ার নেশা ওকে অন্য লেভেলে তুলে দিয়েছে। এখন ও পুস্তক সমালোচনাও করছে। এ রকম কাজ বিশ্বের আর কোনও সক্রিয় ক্রিকেটার করেছে বলে আমি জানি না। আপনারা ইচ্ছে করলে টেন্ডোর ‘বুক রিভিউ’ পড়তে পারেন এইচটিটিপি://রায়ানটেনদুশখাতে.ওয়ার্ডপ্রেস.কম ওয়েবসাইটে। টেন্ডো বলছিল, ও একটা বই সাত দিন ধরে পড়ে, তার পর সেটার সমালোচনা লেখে। ও শেষ যে বইটা রিভিউ করেছে তার নাম ‘নার্কোপোলিস’। জিত থাইল-এর লেখা। মনে হয় না বইটা আমি পড়েছি বলে। তবে আমার সতীর্থের রিভিউটা পড়ে উপভোগ করেছি। ঠিক করেছি, আমি যখনই আত্মজীবনী লিখব, টেন্ডোই সেই বইয়ের রিভিউ করবে।
সেই বইয়ে আইপিএল নিয়ে একটা অধ্যায় নির্ঘাত থাকবেই। গত বছরের মহাসাফল্যের পর এ বার আমাদের নিজেদের ম্যাচের রেজাল্টের সমানই গুরুত্ব সহকারে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে অন্য দলগুলোর ম্যাচের ফলাফলের দিকেও। এই মুহূর্তে আমাদের শেষ দু’টো ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিততে তো হবেই। সেই সঙ্গে অন্য দলের কয়েকটা ম্যাচের রেজাল্টও আমাদের সুবিধে মতো হওয়াটাও ভীষণ দরকার।
এমনকী এই লেখাটার সময় আরসিবি-কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচ চলছিল। আর প্রায় মিনিটে-মিনিটে বেঙ্গালুরুর স্কোরের আপডেটের খোঁজও চলছিল কেকেআর টিমে। যেটা এই পরিবেশে যথেষ্ট বিরক্তিকর।
রাঁচিতে আমাদের আরসিবি ম্যাচের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে আমাকে এক জন প্রশ্ন করলেন, “আপনি ক্রিকেট মাঠে হাসেন না কেন?” আমি প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম আর একটা ফালতু উত্তর দিলাম। যার মানে, নির্মল-নিরপরাধ প্রশ্নও এক-এক সময় বিরক্তকর লাগে। আমি ঠিক কি না জানি না, তবে নিজে সব সময় খুব মন দিয়েই ক্রিকেটটা খেলি। সেটা স্কুল, জুনিয়র কিংবা আন্তর্জাতিক যে পর্যায়েই হোক না কেন। আমার বিচারে মানুষ খেলাধুলো করে জেতার জন্যই। আর সেটা যখন আমার জীবনে অনেক সময় ঘটে না, কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠি! সে জন্যই আমার মুখে হাসি থাকে না।
আর হ্যাঁ, রাঁচির দর্শকেরা আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন, আমাদের দিকে আরও বেশি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। এখানকার নতুন স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু আমি মনে করি, উইকেটটা যথেষ্ট ভাল। একটু হয়তো স্লো, কিন্তু নিজে ভাল ব্যাট না করতে পেরে পিচ বা তার প্রস্তুতকারককে কারও দোষারোপ করাটা ঠিক নয়। এখানে গত ম্যাচে খারাপ শট খেলার ব্যাপারে আমি নিজেও দোষী। ওই সময় আমি ক্রিজে জমে উঠেছিলাম আর বোলিংও তেমন কিছু আহামরি হচ্ছিল না। আশা করি সেই বিশ্রী শটের মেরামত আমি পুণে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে করতে পারব। |