এ বার কুখ্যাত সমাজবিরোধী রমেশ মাহাতোর সঙ্গে আদালতের লক-আপে দেখা করতে এসে গ্রেফতার হলেন রাজ্যের খাদ্য দফতরের প্রাক্তন এক চিফ ইঞ্জিনিয়ার। তিনি প্রোমোটারি ব্যবসায় যুক্ত। আরও কয়েক জন প্রমোটারের বিরুদ্ধে গোপনে তদন্ত শুরু করছে হুগলি জেলা পুলিশ।
সোমবার হাওড়া জেল থেকে শ্রীরামপুর আদালতে আনা হয় রমেশকে। আদালতের লক-আপের বারান্দায় দাঁড়িয়ে শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই প্রোমোটারের সঙ্গে কথা বলছিল রমেশ। পুলিশের দাবি, একটি ফ্ল্যাটের কত বখরা রমেশকে দিতে হবে, তারই দর কষাকষি চলছিল। তদন্তকারী অফিসারেরা জানাচ্ছেন, জেলার আর কোন কোন প্রোমোটার রমেশকে তোলা দেন, অথবা রমেশ-সহ অন্য দুষ্কৃতীদের টাকা আবাসন তৈরির কাজে খাটান, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শ্রীরামপুরের অন্তত তিন জন প্রমোটারের কাজ বন্ধ করে আবাসন তৈরির বৈধ কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলেছে পুলিশ। কয়েক দিন আগে বলরাম নাগ নামে এক প্রোমোটারকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজস প্রমাণিত হলে, প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও রাঘববোয়ালও ছাড় পাবে না।”
গত শনিবার শ্রীরামপুরের চাতরায় ভরদুপুরে দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, এক সময়ের ‘ত্রাস’ হুব্বা শ্যামলের দাদা মিহির দাস ওরফে বাচ্চুকে খুন করতে এসে রমেশের দলবলই ওই কাণ্ড ঘটায়। জেলা পুলিশের একাংশের মতে, গত বেশ কিছু দিন ধরে পুলিশের হাতে বেগ পেয়ে রিষড়া-শ্রীরামপুরে দুষ্কৃতীমূলক কাজ বাড়ানোর চেষ্টা করছে রমেশের দলবল। পুলিশের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতেই তাদের এই পরিকল্পনা বলে তদন্তকারীদের দাবি। শনিবারের ঘটনার পরে পুলিশ অবশ্য রমেশের ‘ডানা ছাঁটতে’ উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই প্রমোটারদের গতিবিধির উপরে গোপনে নজর রাখা শুরু হয়েছে। আবাসনের দৈর্ঘ্য মেপে প্রোমোটারদের থেকে রমেশ টাকা নেয় বলে পুলিশের দাবি।
বছর দেড়েক আগে হুগলির ‘ডন’ হুব্বা শ্যামল খুন হয়ে যাওয়ার পরে শ্রীরামপুর মহকুমার শিল্পাঞ্চলের অন্ধকার জগতের অবিসংবাদিত বেতাজ বাদশা রমেশ। শ্যামলকে খুনের অভিযোগে জেলবন্দি থাকলেও গরাদের পিছন থেকে রাজ্যপাট পরিচালনা করছে সে। জেলের ভিতর থেকেই মোবাইলে নির্দেশ পৌছে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু শ্রীরামপুরই নয়, হাওড়া আদালত বা জেল, হুগলি জেলেও রমেশের সঙ্গে দেখা করতে ‘অনুরাগী’দের ভিড় লেগে থাকছে। এ দিন কোমরে ব্যথা রয়েছে দাবি করে আদালতের লক-আপে নিজের জন্য চেয়ার আনানোর দাবি জানায় রমেশ। আদালত অবশ্য সেই অনুমতি দেয়নি।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, জেলা পুলিশের একাংশ রমেশ বা শ্যামলকে ঘাঁটাতে সাহস করত না। এমনকী তারা রমেশের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করে চলত। বাম আমল থেকেই রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকেছে এই সব সমাজবিরোধীরা। বন্ধ কারখানার জমি লুঠ থেকে শুরু করে নানা দুষ্কর্ম করেছে দিনের আলোয়। চোখ বুজে থেকেছে পুলিশ-প্রশাসন। ক্রমেই মাত্রাছাড়া হয়েছে এলাকা দখলের লড়াই। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্যে সরকার বদলের পরে দুষ্কৃতীদের ছাতাও বদলেছে। শাসক দলের কিছু নেতার সঙ্গে এখন যোগাযোগ রমেশের। জেলার এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “রমেশ জেলে থাকায় অনেকেই ব্যথিত।”
তৃণমূল শিবিরে খবর, রিষড়ার একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে রমেশের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। জেলা পুলিশ অবশ্য এদের প্রতি এখনও ‘সহানুভূতিশীল’। সে কারণেই এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও বহালে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রিষড়া স্টেশনে এক কাউন্সিলরকে দুষ্কৃতীরা গুলি করলেও সেই তদন্ত কার্যত ধামাচাপা পড়েছে। পুলিশের একটি মহল এবং রাজনৈতিক শিবিরের খবর, রমেশের সাগরেদরাই ‘বখরা’ নিয়ে গোলমালের জেরে সে দিন ওই কাউন্সিলরকে গুলি করেছিল। |