|
|
|
|
ঘুমন্ত ট্রেনে টাকা-গয়না লোপাট |
সংরক্ষিত কামরা কি সুরক্ষিত, প্রশ্ন যাত্রীর |
সায়নী ভট্টাচার্য • কলকাতা |
স্ত্রীর চিৎকার শুনে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন স্বামী। দেখলেন, ট্রেনের বাতানুকূল কামরার করিডর ধরে ব্যাগ হাতে দৌড়ে পালাচ্ছে এক কিশোর। ব্যাগটি দেখেই চিনতে পারলেন তিনি। তাঁরই স্ত্রীর ব্যাগ। তিনিও ‘চোর চোর’ করে দৌড় লাগালেন কিশোরের পিছনে। দরজার কাছে যখন পৌঁছলেন, চোর তত ক্ষণে হুড়মুড়িয়ে ট্রেন থেকে নেমে পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির তলা দিয়ে অন্য দিকে চম্পট দিয়েছে।
চিৎকার-চেঁচামেচিতে রেল পুলিশ এল ঠিকই। কিন্তু সব শুনেও তারা কিছু ক্ষণ নীরব ও নিষ্ক্রিয় থেকে চলে যায় বলে অভিযোগ গৌড় এক্সপ্রেসের ওই ট্রেনযাত্রীর। রাজীব পাণ্ডে নামে ঝাড়খণ্ডের ওই বাসিন্দা স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে শিয়ালদহে পৌঁছে জিআরপি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সোমবার রাতের এই ঘটনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের সংরক্ষিত কামরাতেও যাত্রী-নিরাপত্তার দুর্দশা ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী রাজীবের প্রশ্ন, কামরা সংরক্ষিত ঠিকই, কিন্তু যাত্রীরা সুরক্ষিত কি? ওই ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, চোখের চিকিৎসার জন্য স্ত্রী শিবানী পাণ্ডে এবং ছেলেকে নিয়ে তিনি কলকাতায় আসছিলেন। সোমবার রাতে পাকুড় থেকে তাঁরা উঠেছিলেন গৌড় এক্সপ্রেসের টু-টিয়ার বাতানুকূল কামরায়। স্ত্রীর ব্যাগে ছিল কয়েক হাজার টাকা আর গয়না। বর্ধমান স্টেশনে সেই ব্যাগ চুরি যাওয়ার পরে মঙ্গলবার সকালে তাঁরা পৌঁছন কলকাতায়। রাত পর্যন্ত ব্যাগ বা চোরের হদিস দিতে পারেনি পুলিশ। কয়েক দিন আগে শিয়ালদহ-অজমের এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরায় এক মহিলা যাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় চোর। দেখা যায়, সে রেলেরই কর্মী!
কী ঘটেছিল গৌড় এক্সপ্রেসে?
রাজীব পুলিশকে জানান, তিনি ৩১ নম্বর বার্থে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন ৩৩ নম্বর বার্থে। ছেলে একটু দূরে ১৪ নম্বর বার্থে শুয়ে ছিলেন। রাত ৩টে নাগাদ স্ত্রী শিবানীর চিৎকারে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। স্ত্রী তাঁকে জানান, টাকা-গয়নার ব্যাগ চুরি হয়ে গিয়েছে। ট্রেনটি তখন বর্ধমান স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। শিবানী জানান, ব্যাগটি জড়িয়ে ধরেই ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। আচমকা তাতে টান লাগে। ঘুম ভেঙে যেতেই তিনি দেখেন, একটি কিশোর তাঁর ব্যাগ নিয়ে দরজার দিকে দৌড়চ্ছে। তখনই তিনি চিৎকার করে ওঠেন। তাঁর স্বামী রাজীবও চোরের পিছনে ধাওয়া করেন।
রাজীব জানান, প্ল্যাটফর্মের উল্টো দিকেও কামরার দরজা খোলা ছিল। চোর ব্যাগটি নিয়ে সেই দরজা দিয়েই পাশের লাইনে নামে এবং দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির তলা দিয়ে পালিয়ে যায়।
কামরায় তখন জেগে উঠেছেন অনেকেই। রাজীব কামরায় ফিরে দেখেন, চেঁচামেচি শুনে রেল পুলিশ চলে এসেছে। রাজীব বলেন, “ওদের সব জানালাম। কিন্তু পুলিশ কিছুই করল না। সব শুনে চলে গেল।” তাঁর প্রশ্ন, এটাই কি বাতানুকূল কামরার নিরাপত্তা? সংরক্ষিত ওই কামরায় চোর ঢুকল কী করে? রেলকর্তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। শিয়ালদহের এসআরপি উৎপলকুমার নস্কর বলেন, “ঘটনাটি বর্ধমানের। তাই আমরা ওই অভিযোগ সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।” আর বর্ধমান রেল পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
শিয়ালদহে লিখিত অভিযোগ করার পরে রাজীব বলেন, “বাড়তি নিরাপত্তার আশায় আমরা এসি কামরার টিকিট কাটি। কিন্তু সেখানেও যে কোনও নিরাপত্তাই নেই, টাকা-গয়না খুইয়ে সেই শিক্ষাই হল!” |
|
|
|
|
|