|
|
|
|
সিবিআইয়ের স্বায়ত্তশাসন |
তিন বছর আগের খসড়া আইন দেখবে মন্ত্রিগোষ্ঠী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তিন বছর আগে তৈরি হলেও এত দিন সেটি ফাইলচাপা হয়েই পড়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের ধমকের পরে অবশেষে ধুলো ঝেড়ে ফের সামনে আসছে নতুন সিবিআই আইনের খসড়া। যেখানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির কাজের পরিধি ও ক্ষমতা দুই-ই বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনার পরে সিবিআইকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে নতুন মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করেছেন, তারা আপাতত ২০১০ সালের এই খসড়া আইনটিকেই খতিয়ে দেখবে।
কয়লার ব্লক বণ্টন মামলায় সিবিআইকে ‘মনিবের খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি’ আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির স্বায়ত্তশাসন সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্র কোনও আইন আনছে কি না, আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে তা জানাতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওই সমালোচনাকে হাতিয়ার করে পথে নেমেছে বিরোধী দলগুলিও। এর পরেই মাঠে নামেন প্রধানমন্ত্রী। চিদম্বরমের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে সিবিআইকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য নতুন আইন তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিন্হাও ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীকে তাঁর মতামত জানাবেন। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে হলফনামা দেওয়া হবে, তা তৈরির ভারও দেওয়া হয়েছে এই মন্ত্রিগোষ্ঠীকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, মন্ত্রিগোষ্ঠীতে যাবতীয় আলোচনার খুঁটিনাটি তাঁর দফতর ও ক্যাবিনেট সচিবালয়কে জানাতে হবে।
কী রয়েছে ওই খসড়া সিবিআই আইনে?
সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ১৯৪৬ সালের দিল্লি পুলিশ স্পেশ্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআইয়ের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার আগের সেই আইন মেনে কাজ করতে গিয়ে এখন অনেক ক্ষেত্রেই সিবিআইকে সমস্যায় পড়তে হয়। সেই কারণে সিবিআই-এর নিজের উদ্যোগেই নতুন আইনের খসড়া তৈরি হয় ২০১০ সালে। সেখানে সিবিআইয়ের কাজের পরিধি ও ক্ষমতা দুই-ই বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। এখন সরকার নিজেই আইপিএস অফিসারদের একটি বাছাই তালিকা থেকে সিবিআই প্রধান বেছে নেয়। তার বদলে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের নিয়ে তৈরি একটি কমিটির মাধ্যমে সিবিআই প্রধান নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল খসড়া আইনে। সারদা গোষ্ঠীর মতো মামলায় অসম ও ত্রিপুরায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গে এখনও তার অধিকার পায়নি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। তারা চাইছিল, এই সব ক্ষেত্রে সিবিআইকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে তদন্তের অধিকার দেওয়া হোক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে তাতে আপত্তি উঠেছিল। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও এই ধরনের একটি আইনের পক্ষে সওয়াল করেছিল।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ওই খসড়া আইনে সিবিআইকে বাড়তি ক্ষমতা ও গঠনতন্ত্র বদলের কথা বলা হলেও পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা ছিল না। এখন কী ভাবে সিবিআইকে সেই স্বায়ত্তশাসন দেওয়া যায়, তা চিদম্বরমের মন্ত্রিগোষ্ঠী খতিয়ে দেখবে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এত দিন সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি কেন? সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টও ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন তুলেছে। আইন তৈরির পাশাপাশি মন্ত্রিগোষ্ঠীকে এই প্রশ্নের জবাব তৈরির দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম ছাড়াও ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে, বর্তমান আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল, বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী।
কয়লা খনি বণ্টন মামলায় শীর্ষ আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার পরেই নড়েচড়ে বসে মনমোহন-সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, ২০১০ সালের খসড়া সিবিআই আইনটিই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তাতে রদবদলের সুপারিশ করুক চিদম্বরমের মন্ত্রিগোষ্ঠী। তার পরে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল গুলাম বাহানবতীর সঙ্গেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
|
পুরনো খবর: সিবিআই-এর মুক্তির জন্য কী আইন, জানাতে হবে দু’মাসে |
|
|
|
|
|