ঘুরতে গিয়েও বাড়ির মত পরিবেশ পাওয়ার চেষ্টা করেন সব পর্যটকেরাই। যেখানে থাকবে না হোটেল বা রিসর্টের মত শুধু ব্যবসার হিসাব বা চেক-আউটের কঠোর নিয়ম। বরঞ্চ পুরোটাই বাড়ির মত পরিবেশ। মূলত পর্যটকদের এই মানসিকতার কথা মাথায় রেখে ডুয়ার্স-এর একটি অংশে রমরমিয়ে চলছে হোম-স্টে বা হোম ট্যুরিজ্যম। মূলত সামসিং, সুনতালেখোলায় ২১টি হোম-স্টে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন পর্যটন আকর্ষণ। শুধু সুন্দর পরিবেশ নয়, ৩০০ টাকা সকালের চা থেকে রাতের খাওয়া, সবই মেলে বলে দিনের পর দিন হোম-স্টে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পর্যটকেরা জানাচ্ছেন, হোম -স্টেগুলিতে পর্যটকদের জন্যে শোওয়ার ঘরের পাশাপাশি বৈঠকখানা, ডাইনিং হলের মত অন্দরমহলেও যাওয়ার সুযোগ থাকে। ভোজনরসিকদের জন্য গরম তাইফু, থুকপা নিয়ে হাজির হন গৃহস্থেরা। শীতকাল হলে তো কথাই নেই, বাড়ির মালিকের উঠোনে থাকা কমলালেবু গাছ থেকে কমলালেবু পেড়ে খাওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয়। থাকার খরচও হাতের নাগালে। রোজ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মধ্যে।
স্থানীয় মধ্যবিত্তরা এলাকায় নিজের বাড়িকে সাজিয়ে গুছিয়ে হোম-স্টে-র আদলে গড়ে তুলতে শুরু করেছেন। বাড়ির সঙ্গে দু’টি-একটি ঘর বাড়িয়ে নিজেরা সেখানে গিয়ে থাকছেন বাড়ির মালিকেরা। মূল বাড়িটা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের জন্যে। এ জন্য প্রশাসনিক অনুমতি না লাগায় ব্যবসার সুবিধাও রয়েছে। সঙ্গে বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুবিধাও।
সুনতালেখোলার অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান সন্তোষ ভুজেল অবসর নেওয়ার বছর দু’য়েক পরে এই ব্যবসায় নামেন। তিনি বলেন, “সুনতালেখোলায় আরও ৮-১০টি নতুন হোম-স্টে খোলার মুখে। আগে পর্যটকেরা সারাদিন থেকে বিকালে চলে যেতেন। এখন তাঁরাই হোমস্টে-র টানে থেকে যাচ্ছেন। গত বছর সামসিং-সুনতালেখোলায় তিন হাজারের বেশি পর্যটক থেকেছেন।”
সামসিং এর সুজন লামা জানান, হোম-স্টে-র জন্য এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থারও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সারাবছরই এখন পর্যটকেরা সামসিং এ থাকছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হচ্ছেন। কয়েকটি জায়গায় কমলালেবু, স্ট্রবেরি চাষ হয়। সেই টানেও পর্যটকেরা আসছেন। আরেকটি হোমস্টে-র মালিক সুরেশ লামা বলেন, “যাঁরা পরিবার নিয়ে ঘুরতে বার হন। তাঁদের হোম-স্টে ভাল লাগবেই। কারণ হোটেল, রিসর্টের থেকে হোম-স্টে’র পরিবেশ অনেক বেশি আপন।”
অ্যাওয়ারনেস ফর কনজার্ভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম সংস্থার আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, “হোম-স্টে বা হোম ট্যুরিজম এলাকার অর্থনীতিকে পাল্টে দিতে পারে সামসিং তার প্রমাণ। কমলালেবুকে ঘিরে খুব ভালো পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। সামসিং-এ ২০১০ সালে বেসরকারি উদ্যোগে এখানে কমলালেবু উৎসবও হয়েছে। তার পর পর্যটকদের কাছে এলাকাটি আরও জনপ্রিয় হয়েছে। সরকারি সাহায্য মিললে বিভিন্ন এলাকায় এই ধরণের পর্যটন ব্যবস্থা আরও প্রসার লাভ করতে পারে।” |