|
|
|
|
নাটক হবে শুনে খুশি হয়েছিল সুনীল |
স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি গৌতম চক্রবর্তী |
‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’ উপন্যাসটা তো বছর সাতেক আগে আমেরিকায় বসে, পুজো সংখ্যার জন্য লেখা... হ্যাঁ, আমেরিকায় পুপলুদের (শৌভিক) ওখানে শুরু করেছিল। শেষটা বোধহয় লিখেছিল এখানে ফিরে। লিখতে বেশি দিন লাগেনি, মাস দু’তিন।
কিন্তু শিশির ভাদুড়িকে নিয়ে উপন্যাস লেখার পরিকল্পনাটা কত দিনের? পরিকল্পনাটা অনেক পরের। দেবুদা (দেবকুমার বসু) ওকে প্রায়ই খোঁচাতেন, শিশির ভাদুড়িকে নিয়ে উপন্যাস লেখার জন্য। দেবুদা শেষ দিকের শিশির ভাদুড়িকে কাছ থেকে দেখেছিলেন, ওঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সুনীলও অনেক দিন লিখব-লিখব করে দেবুদাকে কথা দিচ্ছিল, কিন্তু সময় হয়ে উঠছিল না। তার পর এক দিন দেখলাম, শিশির ভাদুড়িকে নিয়ে নানা বই পড়ছে। সেই বছরেই বোধ হয় উপন্যাসটা লিখল।
সেই উপন্যাস এ বার নাটকের মঞ্চে। কেমন লাগছে? দেখো, এই উপন্যাসটা নাটক হবে জেনে ও খুব খুশি হয়েছিল। এক কথায় দেবেশকে (চট্টোপাধ্যায়) অনুমতি দিয়েছিল। মুম্বই থেকে ফিরে, পুজোর পর ওকে নাট্যস্বত্ব লিখে দেবে, এ রকম কথাও হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেই সব ওলোটপালোট হয়ে গেল। পরে, সুনীলের সব লেখা, কাকে কী স্বত্ব দেওয়া আছে আমরা যখন গোছানোর চেষ্টা করছিলাম, পুপলুকে আমি প্রথমেই এই নাটকটার কথা বলেছিলাম। বাবা কিন্তু দেবেশকে খুব স্নেহ করতেন, এই নাটকটার অনুমতি উনি নিজে দিয়ে গিয়েছেন।
নিঃসঙ্গ সম্রাট উপন্যাসে লেখক নিজেও চরিত্র হয়ে ঢুকে পড়েন। উপন্যাসের শেষদিকে শিশির এক জনকে জিজ্ঞেস করেন, ছেলেটি কে। উত্তর আসে, ‘ওর নাম সুনীল। কবিতা লেখে। শক্তির বন্ধু।’ সুনীলরা কি প্রায়ই শিশিরবাবুর বিটি রোডের বাড়িতে যেতেন? প্রায়ই নয়। আমি সুনীলের থেকে শুনেছি, ওরা নাকি দু’ তিন বার শিশির ভাদুড়ির বাড়িতে গিয়েছিল। তার বেশি নয়। তবে শিশির ভাদুড়ির আমেরিকায় গিয়ে নাটক করা...আমেরিকায় প্রথম বাংলা নাটক, সেই ঘটনা সুনীল মাঝে মাঝেই বলত।
আপনি শিশির ভাদুড়ির নাটক দেখেছেন? না।
সুনীলের উপন্যাসে একটা জায়গা আছে। আমেরিকায় নাটক ফ্লপ, হোটেলে থাকার পয়সাও নেই। শিশিরকুমার বলছেন, লাখ টাকা পেলেও এখানে থাকব না। এখানে আমাকে কে চিনবে? কলকাতায় আমি শিশির ভাদুড়ি! হ্যাঁ, শিশিরবাবুর শুনেছি, ওই রকমই মেজাজ ছিল।
কিন্তু উপন্যাসের চরিত্রদের মধ্যে তো মাঝে মাঝে অজ্ঞাতসারে, বেঁকেচুরে লেখকের সেল্ফ-প্রোজেকশন লুকিয়ে থাকে। জীবনের শেষ দিকে লেখা ওই লাইনটা, লাখ টাকা পেলেও থাকব না, এখানে কে আমাকে চিনবে....এটার মধ্যে বিখ্যাত প্রৌঢ় লেখকের অনুভূতি লুকিয়ে নেই তো? অতটা মনে হয় না। তবে উপন্যাসের চরিত্রদের থেকেও সুনীলের অনুভব আরও সরাসরি আসত ওর কবিতায়। কিন্তু মানুষটাই আর নেই। তাঁর লেখাগুলি এ বার সমালোচক বা পাঠকেরা কী ভাবে পড়বেন, তাঁদের ব্যাপার।
‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’ উপন্যাসে শিশির ভাদুড়ির জন্য একটা মায়া থেকে যায়। জনপ্রিয়তা এবং প্রতিভা নিয়েও অভিমানী। শিশির ভাদুড়ি সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়? প্রতিভাবান অভিনেতা, পরিচালক। কিন্তু মানুষটা সম্বন্ধে কোথায় যেন একটা প্রশ্নও থেকে যায়। কঙ্কাবতীকে বিয়ে করলেন না কেন? কোথাও কি প্রাচীন জমিদারি বংশের আত্মগরিমা থেকেই কঙ্কাবতীকে স্ত্রীর সম্মান দিতে পারলেন না? |
|
|
|
|
|