কুকুরের কামড়ে হাসপাতালে গিয়ে ইঞ্জেকশন নিয়েও মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। গত বছর অক্টোবরের ওই ঘটনায় চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। এ বার ওই ঘটনাকে হাতিয়ার করে এলাকার এক সমাজবিরোধী ক্রমাগত তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন ওই হাসপাতালের বিএমওএইচ কুণাল মুখোপাধ্যায়। কুণালবাবুর অভিযোগ, মুজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তি তাঁকে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল করারও চেষ্টা করছে। সম্প্রতি এ নিয়ে তিনি প্রশাসন ও পুলিশের কাছেও দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই চিকিত্সকের দাবি, “আতঙ্কে আছি! এ ভাবে চলতে থাকলে আমার পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব নয়।”
গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর একটি পাগলা কুকুরে কামড়েছিল সদাইপুর থানা এলাকার সগর গ্রামের গ্রামের চার জনকে। সময় মতো তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল জলাতঙ্কের টিকা এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন। হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এ ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পদ্ধতিটিই মানা হয়নি। ক্ষতস্থানের বদলে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হয় রোগীর কোমরে। কিছু দিনের মধ্যেই জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে সিউড়ি সদর হাসপাতালে মারা যায় চার জনের দু’জন। তার মধ্যে ১১ বছরের এক বালকও ছিল। ওই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। গ্রামবাসীরা মিলিত ভাবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। সেই নিয়ে তদন্ত সম্পূর্ণ হয়েছে বলেও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই অবশ্য সেই চার রোগীর চিকিত্সক উচ্চ শিক্ষার জন্য দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
বিএমওএইচ কুণাল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যদি চিকিত্সার গাফিলতিতেই ওই ঘটনা ঘটে থাকে, তার জন্য আইনকানুন রয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে যা হওয়ার হবে! কিন্তু মুজিবর রহমান নামে এক সমাজবিরোধী আমাকে সেই সময় থেকে শুধু হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। হাসপাতালে আসা যাওয়ার পথে সে আমাকে তাড়া করছে। তাই বাধ্য হয়েই প্রশাসন এবং ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি দুবরাজপুর ও সদাইপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।” জেলার ভারপ্রাপ্ত সিএমওএইচ গুরুদাস পাত্র জানিয়েছেন, বিএমওএইচের অভিযোগ পেয়েই পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার তদন্তের কী হাল, এই প্রশ্ন করা হলে গুরুদাসবাবু বলেন, “তদন্ত করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলে জানি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার পরে আমরা এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের অভিযোগ সিএমওএইচ-কে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ একজন কর্তব্যরত সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করবেন, তা ঠিক নয়।” অন্য দিকে সদাইপুর থানার দাবি, অভিযুক্ত পলাতক। পুলিশ তাকে খুঁজছে। |