শহরের মুখ ঢেকে যাচ্ছিল বিজ্ঞাপনে। আকাশ দেখাও ভার! চোখ মেললেই নানা সংস্থার বাহারি বিজ্ঞাপন সংবলিত হোর্ডিংয়ের হাতছানি। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, শহরের প্রাণকেন্দ্রে ট্যাক্সিস্ট্যান্ড এলাকায় জেলার প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণচন্দ্রের মর্মরমূর্তিও ঢাকা পড়েছে বিজ্ঞাপনে।
অবশেষে সোমবার থেকে শহরে হোর্ডিং উচ্ছেদের কাজ শুরু করল পুরুলিয়া পুরসভা। এ দিন সকালে পুরসভার কাউন্সিলর ও কর্মীরা হাসপাতাল মোড় থেকে হোর্ডিং উচ্ছেদ শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত রাজ্য সরকারের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের হোর্ডিংও উচ্ছেদের আওতা থেকে বাদ পড়েনি। তবে, ওই হোর্ডিং খুলে ফেলা উচিত কি না, এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোর্ডিং উচ্ছেদ কমিটির সদস্য তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের বিভাস দাস অবশ্য বলেন, “সরকারের হোর্ডিং অবশ্যই থাকবে। প্রথমে যখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব খুলে ফেলা হবে, সেই মোতাবেকই আমরা খুলে ফেলেছি। ওই হোর্ডিং আরও ভাল জায়গায় লাগানো হবে।” |
কোর্ট মোড়, হাসপাতাল মোড়, হাটের মোড়, স্টেশন এলাকা, দেশবন্ধু রোড, রাঁচি রোড, পোস্ট অফিস মোড়, জিলা স্কুল মোড়, সাহেব বাঁধের পাড়-সহ নানা জায়গা হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে বলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ। লোকসেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতোর কথায়, “ঋষি নিবারণচন্দ্র আপামর পুরুলিয়া তথা মানভূমবাসীর কাছে শ্রদ্ধেয় নাম। তাঁর মূর্তিটিও বিজ্ঞাপনের আড়ালে চলে যাচ্ছিল। ওই মূর্তির পাদদেশে বিভিন্ন সংগঠনের নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ফুটপাথের দোকানে ক্রমশ সেই এলাকা দখল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মূর্তির কাছেই একটি সিগন্যাল পোস্ট করায় মূর্তির সৌন্দর্য ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি পুরসভার দেখা উচিত।” পুরুলিয়া জগন্নাথ কিশোর কলেজের শিক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, “আমরা এ ভাবে শহর জুড়ে হোর্ডিং লাগানোর অতীতেও বিরোধিতা করেছি। কেন না এ ভাবে বিজ্ঞাপন লাগানোর জন্য খুঁটি পোঁতায় রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। দেরিতে হলেও পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাব। চাইব, গোটা শহরই যাতে হোর্ডিং মুক্ত হয়।”
বিভাসবাবু বলেন, “এমন অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে যে, অনুমতি ছাড়াই কোনও কোনও সংস্থা কোথাও হোর্ডিং লাগিয়েছে। তা ছাড়া এই সমস্ত বিজ্ঞাপন থেকে পুরসভার আয়ও যে তেমন ছিল না, তা বৈঠকে পুরপ্রধান নিজেই স্বীকার করেছেন। আমরা বৈঠকে বলি, এই সমস্ত হোর্ডিং কেন সরিয়ে ফেলা হচ্ছে না? অবশেষে তিনি রাজি হন।” পুরপ্রধান, তৃণমূলের তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শহরকে হোর্ডিং মুক্ত করার। সেই মোতাবেক এ দিন থেকেই হোর্ডিং সরানো শুরু হয়েছে।” হোর্ডিং থেকে পুরসভার আয় না হওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য পুরসভার অনেক আগের দর রয়েছে। নতুন দর ধার্য না হওয়ায় আয় কম হয়েছে।
|