সিউড়িতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্মরজিত্ বসুর মৃত্যুর ঘটনার জড়িত সন্দেহে তাঁর পাঁচ সহপাঠীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন মৃতের বাবা চন্দ্রনাথ বসু। সোমবার সিউড়ি থানায় তিনি ওই অভিযোগ জানান। ওই ছাত্রের পরিবার এবং পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগে হস্টেলের ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধেও ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহের কথা জানানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সিউড়ি থানায় করা অভিযোগে বিশ্বনাথবাবু দাবি করেছেন, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হস্টেল থেকে পুকুরে স্নান করতে নিয়ে যাওয়ার সময় বা পুকুরে নিয়ে গিয়ে জখম করে জলে ডুবিয়ে তাঁর ছেলেকে খুন করেছে সহপাঠীরা। কারণ, কিছু দিন থেকেই ছেলের সঙ্গে সহপাঠীদের কোনও বিষয়ে সমস্যা চলছিল। অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্র মাঝেমধ্যেই স্মরজিত্কে হেনস্থা করা ছাড়াও হুমকি দিতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, গত এপ্রিল মাসে ছুটিতে এসে বাড়িতে স্মরজিত্ ওই সমস্যার কথা জানিয়ে হস্টেলে ফিরতে আপত্তি করেন। পরে ফাইনাল ইয়ারের কথা ভেবে তাঁকে বুঝিয়ে সিউড়িতে পাঠানো হয়। ওই দিন দুপুরেও স্মরজিত্ শেষবার টেলিফোন করে তাঁকে পুকুরে যাওয়ার জন্য ওই সহপাঠীরা জোরাজুরি করছে বলেও জানিয়েছিলেন বলে পরিবারের দাবি। |
গত ৬ মে কোচবিহারের পাটাকুড়া এলাকার ওই ছাত্র সিউড়ির তিলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতরা পুকুরে বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিলেন। বন্ধুরা স্নান সেরে ফিরে আসেন। পরে ওই পুকুর থেকে স্মরজিতের দেহ উদ্ধার করেন দমকল কর্মীরা। চন্দ্রনাথবাবু এ দিন বলেন, “পুলিশ সুপারকে সব বলেছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি, ছেলের খুনে জড়িতরা শাস্তি পাবে।”
ছাত্র পরিষদের কোচবিহার জেলা সভাপতি অরিন্দম দে বলেন, “পরিকল্পিত ভাবে স্মরজিত্কে খুন করা হয়েছে। সঠিক তদন্তের দাবিতে আমরা রাজ্যপালের দ্বারস্থ হচ্ছি।” একই ভাবে এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি গোস্বামী বলেন, “বোলপুরের সাংসদ রামচন্দ্র ডোম ও সংগঠনের জেলা নেতৃত্বকে পুরো ঘটনা জানিয়েছিলাম। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন।” কোচবিহারের জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমরাও ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি চাইছি। তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ও বীরভূমের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি।” প্রসঙ্গত গত ১১ মে কোচবিহারে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুভেন্দুবাবু কোচবিহারে আসেন। অনুষ্ঠানে মৃতের পরিবারের তরফে নেতা মন্ত্রীদের কাছে ঘটনার তদন্তের ব্যাপারে সহযোগিতার আবেদন করা হয়।
স্মরজিতের কাকা বিশ্বজিত্ বসুর দাবি, “ময়নাতদন্তের পরেই পাঁচ সহপাঠীর বিরুদ্ধে ভাইপোকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাতে আমল দেয়নি।” যদিও অসহযোগিতার অভিযোগ মানেনি পুলিশ। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “আগে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ হয়েছিল। সেইমতো তদন্ত শুরু হয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ হওয়ার পর এখন সে ভাবেই তদন্ত হবে।”
এ দিন সিউড়ি থানায় অভিযোগ জমা দেওয়ার পর পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন স্মরজিতের পরিজনেরা।
|