ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়, দাবি
সিউড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া কোচবিহারের বাসিন্দা স্মরজিৎ বসু (২২)-র মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা নয় বলে মনে করছে পরিবার। সোমবার তিলপাড়া পঞ্চায়েতের পাতরা পুকুরে চার বন্ধুর সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিলেন সিউড়ি বি ই কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র স্মরজিৎ। বন্ধুরা স্নান সেরে ফিরে এলেও পরে ওই পুকুর থেকে স্মরজিতের দেহ উদ্ধার করেন দমকল কর্মীরা। পরিবারের লোকদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে স্মরজিতকে। মঙ্গলবার রাতেই পরিজনদের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করার কথা। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা অবশ্য বলেন, “ইতিমধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু হয়েছে। যদি মৃতের পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করেন তা হলেও তার তদন্তও হবে।”
স্মরজিৎ বসু। —ফাইল চিত্র।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরে স্নান-খাওয়া সেরে হস্টেল থেকে কোচবিহারের বাড়িতে মা ইতি দেবীকে ফোন করেন স্মরজিৎ। বন্ধুরা পুকুরে স্নান করতে যেতে বলছে জানানোয় তাঁর মা নিষেধ করেন। তখনও পুকুরে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানাননি। সেই স্মরজিৎ পুকুরে ডুবে মারা গিয়েছেন এটা মানতে পারছেন না কেউই। স্মরজিতের পরিজনদের দাবি, ঘটনা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী কথাও বলছেন। এ দিন কলেজের ডিরেক্টর ভবেশ ভট্টাচার্য দাবি করেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে স্মরজিৎ আরও চার বন্ধুর সঙ্গে ওই পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল। সম্ভবত ওই চার জন তাঁর সহপাঠী। তবে তাঁরা কারা আমরা তা এখনও চিহ্নিত করতে পারিনি।” এর পরেই তিনি জানান, “চার পড়ুয়া দুপুর তিনটে নাগাদ হস্টেলে ফিরে খবর দেয় স্মরজিৎ ডুবে গিয়েছে। তারপর আমরা নিজেরা খোঁজ চালাই। পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ দমকলে খবর দেওয়া হয়।” পরিজনদের প্রশ্ন, চার পড়ুয়া যদি স্মরজিতের ডুবে যাওয়ার খবর দিয়েই থাকেন তাহলে ভবেশবাবু তাঁদের চিহ্নিত করা যায়নি কেন বলছেন?
সোমবার কোচবিহারের পাটাকুড়া এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্র আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিসাধীন বলে খবর পেয়ে রাতেই সিউড়ি রওনা হন স্মরজিতের বাবা পেশায় মুদিখানার দোকানি চন্দ্রনাথ বসু, মা ইতিদেবী ও কয়েকজন আত্মীয়। পরে বাড়ির লোকেরা স্মরজিতের মৃত্যু সংবাদ পান। মঙ্গলবার চন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমার ছেলেকে কিছু খাইয়ে মেরে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে আরও চার বন্ধু ছিল। আমরা সেই নামগুলিও দিয়েছি।”
পরিজনদের আরও দাবি, পাটাকুড়ার বাড়িতে প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। বিসর্জনে অন্যদের সঙ্গে সামিল হলেও কোনও দিন পুকুরে নামেননি স্মরজিৎ। ডুবে মৃত্যু হলে তাঁর নাক-মুখে রক্তের দাগ থেকে গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা নয়, অথচ প্রাথমিকভাবে ওই সব লক্ষণ দেখা গিয়েছে বলে পরিজনেরা জানান। মৃতের কাকা শান্তনু বসু বলেন, “ভাইপো সাঁতার পারত না বলে জেলে নামত না। তা ছাড়া ওর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। দুর্ঘটনার কথা দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখা হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে ওকে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
কোচবিহার রামভোলা হাইস্কুল থেকে স্টার মার্কস পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন স্মরজিৎ। ওই স্কুল থেকে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করে সিউড়ি বিই কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। এ বছর তাঁর ফাইনাল ইয়ার। পরিজনেরা জানান, সামনের মাসে নয়ডাতে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তাঁর খুড়তুতো দাদা সোমনাথবাবু বলেন, “স্মরজিৎ মেধাবী ছাত্র ছিল। কোনও ঝামেলায়ও কখনও জড়ায়নি। শরীরের আঘাত দেখে খুনের সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। যাদের সঙ্গে ও হস্টেল থেকে পুকুরে গিয়েছিল, তারা ওকে নানা ভাবে উত্যক্ত করত। আমরা সবই পুলিশকে জানাব। দোষীদের শাস্তি চাই।” মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্মরজিতের দেহের ময়না তদন্ত হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.