স্কুলে তালা ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের |
বেতন না পেয়ে ক্লাস বয়কট শিক্ষিকাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
দীর্ঘদিন প্রশাসনিক জটিলতায় ভুগছে সিউড়ি আরটি গার্লস হাইস্কুল। যার জেরে এখনও গত মাসের বেতন পাননি ওই স্কুলের শিক্ষিকারা। তারই প্রতিবাদে তাঁরা সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। স্বাভাবিক ভাবে পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। এ দিকে, স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার অভিভাবকদের একাংশ ও কিছু বহিরাগত লোকজন স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। শুধু তাই নয়, তাঁরা শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের অফিসঘরে তালা বন্ধ করে দেন এবং বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন। প্রায় এক ঘণ্টা পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তার পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গত বছর শুরু থেকেই এই প্রশাসনিক জটিলতা শুরু হয় স্কুলের পরিচালন সমিতির আমন্ত্রিত সদস্যকে কেন্দ্র করে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয়। নির্বাচনে তৃণমূলের ৪ ও কংগ্রেসের ২ জন সদস্য জয়ী হন। কিন্তু পরিচালন সমিতির সম্পাদক করা হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা রণজিৎ সেনগুপ্তকে। প্রধান শিক্ষিকা মৌ দাশগুপ্ত বলেন, “নির্বাচনের পরে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সদস্যদের বৈঠকে ডাকা হয়। ওই বৈঠকের আগে নিয়ম মেনে আমন্ত্রিত সদস্যদের মধ্যে শুধু রণজিৎবাবু আবেদন করেন।” |
জানা গিয়েছে, বৈঠকে রণজিৎবাবুর সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা হতেই নির্বাচিত সদস্য সৈয়দ মেহেবুব মোল্লা পকেট থেকে জেলাপরিষদের সদস্য তথা সিউড়ি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহ নামে এক ব্যক্তির আবেদনপত্র বের করে জমা দেন। তাতে ৬ জন নির্বাচিত সদস্যের সই ছিল।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পরে ওই আবেদনপত্র কেন নেওয়া হল, তা নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয় নির্বাচিত সদস্যা, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর প্রতিনিধিদের মধ্যে। এর পরেই রণজিৎবাবু হাইকোর্টে মামলা করেন। কিছু দিনের মধ্যে দুই নির্বাচিত সদস্যা তাঁদের পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং মেহেবুব মোল্লাও হাইকোর্টে মামলা করেন। এই জটিলতার কথা জানতে পেরে পর্ষদ থেকে আগের বোর্ডকেই আরও কয়েক মাস পরিচালন সমিতির কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়। ওই বোর্ডের সময়কাল শেষ হওয়ার পরে সিউড়ি সদর পশ্চিম চক্রের স্কুল পরিদর্শককে (প্রাথমিক) প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর মেয়াদ গত মার্চ মাসে শেষ হয়। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “বেতন-সহ স্কুলের সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যাবে বলে জেলা স্কুল পরিদর্শককে আগেই লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল।” |
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিআই (ভারপ্রাপ্ত) সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই এসআইকে আরও দু’মাস কাজ চালানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আর দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। ফলে স্কুলে পরিচালন সমিতি বা প্রশাসক না থাকায় গত মাসের বেতন হয়নি। যিনি প্রশাসক ছিলেন তাঁর সময়েও কোনও কারণ ছাড়াই বেতন আটকে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি প্রধান শিক্ষিকার। তিনি বলেন, “গত শনিবার জেলার প্রায় সব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন হয়ে গিয়েছে। আমাদের স্কুলে এমন ঘটনার জন্য সোমবার বৈঠক করে শিক্ষিকারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া নেন। সঙ্গে সঙ্গে ডিআই ও সদর মহকুমাশাসকে জানাই। তার পরে অভিভাবক ও কিছু বহিরাগত লোকজন আমাদেরকে তালাবন্ধ করে রাখেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।” প্রধান শিক্ষিকা জানান, এ দিনের সমস্যার কথা পুলিশ-প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরে জানানো হয়। সিউড়ি সদরের এআইকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে চিঠি আসে। দু’এক দিনের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করছেন প্রধান শিক্ষিকা।
এসডিও চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী বলেন, “ডিআইকে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” ডিআই সন্তোষবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বৈঠকে ব্যস্ত আছি।” পরে তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। পুলিশ জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় |