জট ছাড়ানোর পথে নতুন করে জট বাঁধল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল্স ঘিরে।
হলদিয়া পেট্রোকেমের শেয়ার নিলাম করতে রাজ্য সরকার সম্ভাব্য ক্রেতাদের থেকে ইচ্ছাপত্র চেয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনের তিন দিনের মাথায় পাল্টা নোটিস দিল পেট্রোকেমের অপর অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তাতে তারা জানিয়েছে, কোনও সংস্থা শেয়ার কিনতে চাইলে তার দায় ও ঝুঁকি সেই সংস্থাকেই নিতে হবে। অর্থাৎ, যে আইনি জটিলতার মারপ্যাঁচে পেট্রোকেমের নাভিশ্বাস উঠেছে, সম্ভাব্য ক্রেতারাও তার আঁচ পাবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর পাবলিক নোটিসে।
রাজ্যের অবশ্য দাবি: চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর নোটিস শেয়ারের নিলাম-প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করতে পারবে না। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম মারফত সংস্থায় ১০০ কোটি টাকা ঢালার অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার পেট্রোকেমে নিজেদের শেয়ার বেচতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ১০ জুন। সংস্থার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য: শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি সংস্থাকে চাঙ্গা করার দিকেও সরকার নজর দিচ্ছে। “ঋণদানের শর্ত হিসেবে ব্যাঙ্কগুলো বরাবর চেয়েছে, দুই মালিকই সংস্থায় নতুন করে লগ্নি করুক। রাজ্য নতুন করে পুঁজি ঢালতে প্রস্তুত।” বলেন পার্থবাবু।
এবং সেই প্রস্তুতি নিয়ে আগামী ১৬ মে ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য ঋণদাতার সঙ্গে রাজ্য বৈঠকে বসতে চলেছে। লক্ষ্য, অন্তত ৪০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে ফেলা, যাতে সংস্থার উৎপাদন বন্ধ হয়ে না-যায়। অন্য দিকে রাজ্যের শেয়ার বিক্রির প্রয়াসের পাল্টা পদক্ষেপ করতে চাইছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। কোন যুক্তিতে?
নিজেদের পুরোনো অবস্থানে অনড় থেকে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দাবি: পশ্চিমবঙ্গ সরকার হলদিয়া পেট্রোকেমের যে সাড়ে ৬৭ কোটি শেয়ার বেচতে চাইছে, তার সাড়ে ১৫ কোটি-ই তাদের। শেয়ার নিলামের বিরোধিতা করে চ্যাটার্জি পেট্রোকেম (মরিশাস) এবং চ্যাটার্জি পেট্রোকেম (ইন্ডিয়া)-র তরফে জারি পাবলিক নোটিসে বলা হয়েছে, কোনও সংস্থা ইচ্ছাপত্র জমা দিলে তা নিজেদের ঝুঁকিতে দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে হলদিয়া পেট্রোকেমের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক শেষে সংস্থার চেয়ারম্যান তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সংস্থার মালিকানা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায় রাজ্য। শেয়ার বিক্রি প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরামর্শদাতা সংস্থা ডেলয়েট-কে। ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের মূল্যায়ন-রিপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। ডেলয়েট রিপোর্ট দিয়েছে দেরিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর: রিপোর্ট তৈরি বাবদ রাজ্যের কাছে তারা যে টাকা চেয়েছিল, তা না-পাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। ফলে পিছিয়ে যায় পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা। যদিও পার্থবাবুর আশা, আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে।
দুই অংশীদারের চুক্তি মোতাবেক শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ভূমিকা অবশ্য থাকছেই। রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, যে সংস্থা শেয়ারের দর বেশি দেবে, মালিকানা কিনতে পারবে তারাই। তার আগে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে প্রস্তাব দেওয়া হবে ওই দামে শেয়ার কেনার জন্য। চ্যাটার্জি গোষ্ঠী অসম্মত হলে তবেই সর্বোচ্চ দরদাতাকে শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র বলেন, “রাজ্যের মালিকানা ছাড়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত। কিন্তু যে সব শেয়ার বিক্রির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। সেখানেই আমাদের আপত্তি।”
পেট্রোকেমের দুই মালিকের আইনি বিবাদ কোন পথে নতুন মোড় নেয়, এখন সেটাই দেখার। |