একটা বিশাল সুটকেস। খুলতেই বেরিয়ে এল ল্যাপটপ, রক্ত পরীক্ষার যন্ত্র, মাইক্রোপিপেট, ইনকিউবেটর... আরও অনেক কিছু। সুটকেস নয়, এ আসলে খুদে গবেষণাগার। হাতে করেই বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আবিষ্কারক আইআইটি-রুরকির প্রাক্তন ছাত্র অমিত ভাটনগর।
পড়াশোনা শেষ করে মোটা বেতনের চাকরি নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন অমিত। কিন্তু বেশি দিন মন টিকল না। চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য রকম কিছু করে দেখানোর নেশায় মেতে উঠলেন। সরকারের থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। অন্য কিছু সংগঠন থেকে আরও ৪ কোটি টাকা সাহায্য পান। সব মিলিয়ে শুরু হয় তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। গ্রামের মানুষ তেমন চিকিৎসা-ব্যবস্থা পান না। তাঁদের জন্য কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন।
অমিতের বহমান গবেষণাগারে প্রায় ২৩ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা যায়। তার মধ্যে রয়েছে কিডনি, লিভার, হৃদ্যন্ত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা, রক্তাল্পতা, ডায়াবিটিস, আর্থারাইটিস পরীক্ষা ইত্যাদি। এর ফলে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে কোনও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তো দূরে থাক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছোটখাটো রক্তপরীক্ষার পরিষেবাও নেই, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে অমিতের খুদে গবেষণাগার।
গত কাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এস জয়পাল রেড্ডি আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন অমিতের সুটকেস গবেষণাগার। অমিত বলেন, “সুটকেসের মধ্যে একটা গোটা গবেষণাগার। বিদ্যুৎ না থাকলেও কুছ পরোয়া নেহি। চার্জ দিয়ে রাখার ব্যবস্থা আছে।” মোবাইল গবেষণাগার বানাতে খরচ সাড়ে তিন লাখ টাকা। একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার বানানোর তুলনায় খরচ কম। অমিত বললেন, “আসল সুবিধা হল এর নকশায়। পরীক্ষায় একেবারে সঠিক ফল দেখায়। এক জায়গা থেকে অনত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। খরচও কম পড়ে।”
ইতিমধ্যেই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অমিতের গবেষণাগার কাজ করতে শুরু করেছে। কার্গিল, লেহ, নাগাল্যান্ড, ছত্তীসগঢ়ের গভীর জঙ্গলের প্রত্যন্ত গ্রামে, হরিয়ানা, কেরল ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই খুদে গবেষণাগার। সরকারি এক কর্তা জানান, একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে ৮০০-৯০০ মানুষকে নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বিপদ-আপদে দারুণ কাজ তো দিয়েছেই, সে সঙ্গে দ্রুত রোগ ধরতেও ব্যাপক কাজ দিচ্ছে।” |