চোখের নীরব ভাষাতেই বাঙ্ময় বিবাহবাসর
ড়-বৃষ্টির পরে রাতের গুমোট আকাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিল হাউই বাজি। জল থইথই ছাঁদনাতলায় তখন কনে এসে গিয়েছেন। বাইরে ব্যান্ডপার্টির টানা সুরে কখনও মালাবদল, কখনও ঘরেতে ভ্রমর আসার গানের সুর বেজে চলেছে। পুরোহিত মন্ত্র বলে চলেছেন, ‘যদিদং হৃদয়ং তব....’। দু’পক্ষের পরিবার থেকে পাড়াপড়শি, আমন্ত্রিত সকলেই খাওয়াদাওয়া, হাসিঠাট্টায় ব্যস্ত। ছাঁদনাতলায় তখন নিজেদের মধ্যে ইশারাতেই ব্যস্ত নব বর-বধূ। অন্য কোনও বিয়ের আসর হলে বর-বধূর ইশারা আদানপ্রদান ঘিরে অনিবার্য ঠাট্টা, রসিকতা ধেয়ে আসত। কিন্তু শনিবার রাতের জলপাইগুড়ির রেসকোর্স পাড়ার বিয়ের আসর যে এখানেই ব্যতিক্রমী।
জন্ম থেকেই বাকশক্তি নেই নব দম্পতির। কানেও শুনতে পান না তাঁরা। বছর দু’য়েক আগে প্রতিবন্ধী স্কুলেই দুজনের প্রথম দেখা। সেখান থেকেই বিয়ের পিঁড়িতে। পাত্র শঙ্কু রায়ের দিদি অপর্ণা মজুমদারের কথায়, “একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্কুলে ভাই পড়াশোনা করত। সেখানেই শীলাও পড়ত। দেখেশুনে দুজনের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।” অন্যদিকে পাত্রী শীলা স্মারকীর মা সুখমায়াদেবী বলেন, “মেয়ের বিয়ের চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছিল। প্রতিবন্ধী মেয়েটার কী ভাবে বিয়ে হবে তাই ভাবতাম।”
শঙ্কু ও শীলা।—নিজস্ব চিত্র।
২৮ বছরের শঙ্কু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। শীলার পড়াশোনা অবশ্য চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। সাধারণ স্কুলের পরিবর্তে দুজনেই বিশেষ স্কুলে হাতের কাজ শিখতে শুরু করেন। শঙ্কু এখন নিজেই প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের পড়াশোনা শেখানোর কাজ করেন। সেলাইয়ের কাজ করেন শীলা। সঙ্গে চিনা খাবার বানাতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার, জানালেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদিকা দীপিকা দাস।
শনিবার বিয়ের আসরে তিনিই কখনও বর কর্তার দায়িত্ব সামলেছেন, আবার নববধূকে সাজিয়ে বিয়ের আসরেও নিয়ে এসেছেন। দীপিকাদেবীর কথায়, “শঙ্কুর বাবা বিয়ের কথা বলতে ওঁদের শীলার খোঁজ দিই। দু’জন পরস্পরকে চিনতেন। তবে আলাপ ছিল না।”
বিয়ের আসরে বাজি থেকে ব্যান্ডপার্টি কোনও কিছুরই খামতি ছিল না। দু’জনের রেজিস্ট্রি বিয়ের আবেদনও ইতিমধ্যে করা হয়েছে। তবে সংশয় তৈরি হয়েছিল এক জায়গাতে। দু’জনে বিয়ের মন্ত্রও উচ্চারণ করবেন কী ভাবে? উপায় বার করে দেন বরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেচ দফতরের কর্মী মিলন রায়। বিয়ের পিঁড়িতে বসে দুজনে মন্ত্র না বললেও মন্ত্র উচ্চারিত হলেই বিয়ে হবে বলে তিনি ঠিক করেন। সেই মত পুরোহিত মশাই বিয়েতে সব মন্ত্র পড়েছেন। মঙ্গলঘটে হাত রেখে দুজনে তখন নিজেদের মধ্যে ইশারাতেই ব্যস্ত। কথা না থাকলেও সেই ইশারা যেন তার চেয়েও বাঙ্ময়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.