তৃণমূল এবং সিপিএমের বাইরে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তুলতে সক্রিয় হওয়া উচিত কি না, সে বিষয়ে দলের জেলা কমিটিগুলির মতামত চাইলেন আরএসপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। কারণ, তাঁদের মতে, তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ ঘটছে। কিন্তু সিপিএমের প্রতি হারানো বিশ্বাস সেই অনুপাতে ফিরছে না।
সিপিএমের সঙ্গে বাম শরিকদের দূরত্ব নানা সময়ে বেড়েছে-কমেছে। এখন, রাজ্যে পরিবর্তনের দু’বছরের মাথায়, আরএসপি-র রাজ্য নেতৃত্বের মনে হচ্ছে, অন্য রকম কিছু পদক্ষেপ করার কথা ভাবা যেতে পারে। তাঁদের মতে, রাজ্যের মানুষ তৃণমূল এবং সিপিএমের কাজকর্ম দেখে হতাশ। আরএসপি-র মতো ছোট দলের যখন হারানোর কিছু নেই, তা হলে বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করলে ক্ষতি কী? এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই দলের জেলা কমিটিগুলির মতামত চেয়েছে আরএসপি-র রাজ্য কমিটি। পাশাপাশি বলা হয়েছে, জেলায় জেলায় নিজেদের উদ্যোগে কিছু কর্মসূচি এবং জনসভা আয়োজন করে পরখ করতে হবে, মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন কি না। জেলাগুলির মতামত পেলে রাজ্য কমিটি আবার আলোচনায় বসবে।
দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে শনিবার এমন প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীই। তাঁর প্রস্তাবের সূত্র ধরেই বৈঠকের অধিকাংশ বক্তা বলেন, এ নিয়ে বিতর্ক সেরে ফেলা দরকার। তবে আরএসপি-র রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের এই ভাবনার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। ভোট ঘোষণা হয়ে গেলে মত যাচাইয়ের প্রক্রিয়া পিছনে চলে যাবে।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিএমের অনেক কাজকর্মেরই আমরা নিয়মিত প্রতিবাদ করেছি। এখন তৃণমূল আরও বেশি অন্যায় করছে। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বও পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না।” দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “তৃণমূলের স্বরূপ খুব দ্রুত ধরা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সিপিএমকে দেখে মনে হচ্ছে, তারা বড্ড আঁকুপাঁকু করছে! সেটাও মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।”
বস্তুত, গৌতম দেবের মতো সিপিএম নেতারা যে ভঙ্গিতে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করছেন, তাতে যথেষ্ট আপত্তি আছে ফ্রন্টের অন্য শরিক দলের মধ্যেও। সিপিআইয়ের এক সাংসদের কথায়, “মমতার দল ও সরকারের ঔদ্ধত্য মানুষ তো দেখছেই। আমাদের উচিত এখন বিনীত ভাবে প্রচার চালানো। কিন্তু আমরা যদি ‘দেখে নেব’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তাতে হিতে বিপরীত হবে!” আরএসপি-র বৈঠকে এক সদস্য বলেছেন, গ্রামেগঞ্জে মানুষ বলছে আগের সরকার গাছের ফল খেত। এখন যারা এসেছে, তারা শিকড় শুদ্ধু খেয়ে ফেলছে! এই দু’পক্ষের বাইরে ভরসা করার মতো বিকল্প থাকলে ভাল হত।
সেই বিকল্প খুঁজতেই নামছে আরএসপি। কিন্তু যাদের সাহায্যে তারা এত দিন ভোটে জিতে এসেছে, সেই সিপিএমের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কি সম্ভব? বড় প্রশ্ন সেটাই! |