নগরায়ন সত্ত্বেও বদলায়নি খোলা জায়গায় শৌচের অভ্যাস
ত কুড়ি বছরে রাজ্যে নগরায়ন বেড়েছে প্রায় কুড়ি শতাংশ। রাজ্যের মোট ১৮ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে দশে সাত জন বাসিন্দাই এখন ৫৮টি প্রথম শ্রেণির নগরীর বাসিন্দা। বাকি ৩ জনই থাকেন রাজ্যের ৩১৭টি শহরে।
কিন্তু নগরায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা বাড়ছে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি সমীক্ষা করেছে কলকাতার ইন্স্টিটিউট অফ্ সোশ্যাল সায়েন্সেস। তাদের রিপোর্ট বলছে, নগরায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস যতটা বাড়ার কথা ছিল, বাস্তব চিত্র এখনও ততটা আশাপ্রদ নয়।
রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ১৮ শতাংশ মানুষের একশো জনের ২৭ জনই বাস করেন বস্তি এলাকায়। এখানকার শৌচ ব্যবস্থার হাল অত্যন্ত খারাপ। বেশির ভাগ মানুষই পুরসভা পরিচালিত সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করেন। এখনও একটা বড় অংশের মানুষ খাটা পায়খানা ব্যবহার করেন। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ৯ লক্ষ মানুষ এখনও খোলা জায়গায় মল ত্যাগ করেন, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। বসতি এলাকার তিনটি প্রথম শ্রেণির শহর, আসানসোল, সোনারপুর ও বাঁকুড়ার দশের মধ্যে চারটি বাড়িতেই কোনও শৌচাগার নেই। সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করার জন্য যে লম্বা লাইন দিতে হয়, তা এড়াতে খোলা জায়গা ব্যবহার করা সহজ বলেই মত অনেক বাসিন্দার।
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রথম শ্রেণির শহরগুলি বাদ দিলে অন্যান্য শহরগুলির বেশিরভাগ পরিবারই যে সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করেন, তাতে জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ শৌচাগারই শুয়োর বা সাফাইকর্মী এসে পরিষ্কার করেন। অনেক সময়ে আবার দেখা যাচ্ছে, সাধারণ শৌচাগার অব্যবহার্য হয়ে পড়ে রয়েছে। জল সরবরাহের অপ্রতুলতাই এর কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিশেষ ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে সাধারণ স্বাস্থ্য পরিকল্পনা ও শৌচাগার নির্মাণ পরিকল্পনার অসমাঞ্জস্যের কারণেও বাসিন্দাদের পক্ষে সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যেমন, কার্শিয়াংয়ের পাহাড়ি এলাকা। বয়স্ক ও শিশুদের বেশিরভাগই উঁচুতে উঠে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন না বলে সাধারণ শৌচাগার তৈরি করা হলেও তা প্রায় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। রয়েছে পরিকাঠামোর সমস্যাও। কার্শিয়াং পুরসভার নিজেদের আলাদা করে কোনও সাফাই কর্মী নেই। এ ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং পুরসভাই তাদের ভরসা। ফলে সেপ্টিক ট্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য নোংরা আবর্জনার স্তূপ নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। আবার বেশ কয়েকটি পুরসভার নিজস্ব ‘জেট ক্লিনার মেশিন’ও নেই। আবর্জনা জমে গেলে অন্য পুরসভা থেকে মেশিন নিয়ে আসতে হয়। দেখা যাচ্ছে, শৌচাগার তৈরি-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো পঞ্চাশ শতাংশ কাজেই সরকারি বিভিন্ন অনুদান থেকে খরচ হচ্ছে। পুরসভাগুলির নিজস্ব কোনও অর্থ নেই। যেটুকু রয়েছে, তার বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে কর্মীদের বেতন-সহ রক্ষণাবেক্ষণের খরচে।
প্রতিষ্ঠানের তরফে অর্চনা ঘোষ বলেন, ‘‘সেন্সাস শহরগুলিকে পুরসভার আওতায় না আনা হলে সমস্যা থেকেই যাবে।” রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব দেবাশিস সেন বলেন, “ওই রিপোর্টটি আমি দেখিনি। তবে গত সাত বছরে আমাদের রাজ্যে স্যানিটেশন খাতে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হয়েছে। রাজ্যে নগর বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়া যায়।”

যে সমস্যা থেকে গিয়েছে
• শহরাঞ্চলের ৯ লক্ষ মানুষ এখনও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন।

• ৪০ শতাংশ বাড়িতেই নেই ব্যক্তিগত শৌচাগার।

• পুরসভাগুলির কাছে নিজস্ব যন্ত্রপাতি বা পর্যাপ্ত সাফাইকর্মী প্রায় নেই বললেই চলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.