|
|
|
|
অক্ষয় তৃতীয়ায় অকাল চড়ক বড়বাড়িতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
গ্রাম বাংলায় চড়ক হয় চৈত্র মাসে। কিন্তু হলদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম বড়বাড়ির ‘শ্রীশ্রী গঙ্গেশ্বর জিউর মন্দির’ প্রাঙ্গণে প্রতি বছর বৈশাখে বসে ‘অকাল’ চড়ক। অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে বৈশাখে শিবের মাথায় জল ঢালতে হাজার কুড়ি মানুষের সমাগম হয় এই গ্রামে।
জাতীয় সড়ক থেকে সঙ্কীর্ণ আঁকাবাঁকা ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বড়বাড়ি গ্রামে পুজোর ঘট বসেছে ৯ দিন আগে অষ্টমী তিথিতে। শনিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে পার্বন। রাত ১২টার পর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ রবিবার দুপুর পর্যন্ত গঙ্গেশ্বর নামে পূজিত শিবলিঙ্গে জল ঢেলেছে। শুরু হয়েছে অক্ষয় তৃতীয়ার গাজন মেলার। চলছে ডন্ডিভাঙা, নীলপুজো, কালী নৃত্য ও পালাগান। ভিড় করেছেন উৎসাহীরা।
বসেছে গ্রামীণ মেলাও। চলবে পাঁচ দিন ধরে। দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে গঙ্গেশ্বর মেলা ও মন্দির উন্নয়ন কমিটি। এর কর্মকর্তা দেবব্রত বেরা, সত্যেন্দ্রনাথ তুঙ্গরা জানালেন, আগে মাঠের ওপর দিয়ে নাগরদোলা, মরণকুঁয়ো আসত। কিন্তু, এখন এখানে পোঁছনোর রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ায় তা আসে না। এ বার তো জলের গাড়ি আনতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। |
|
এই মন্দির ঘিরেই হয় উৎসবের আয়োজন।—নিজস্ব চিত্র। |
কথিত আছে, দেড়শো বছর আগে বড়বাড়ির বাসিন্দা মধুসূদন বেরা অক্ষয় তৃতীয়ায় শিবমন্দির প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পান। সে সময়ে মহিষাদলের গর্গ বংশের রাজা আয়োজিত শিব চতুর্দশীর গাজনে ডাক পড়লে মধুসূদনবাবুর নেতৃত্বে একদল পালাগান গাইতে মহিষাদলে যান। পালাগানে সন্তুষ্ট হয়ে রাজা ‘ইনাম’ দিতে চান। সুযোগ বুঝে প্রজাদের কথা ভেবে তিনি স্বপ্নাদেশের কথা জানালে রাজা বড়বাড়ি এলাকার ১ একর ৯১ ডেসিমেল খাস জায়গা পাট্টা-সহ দান করে দেন। এরপরেই গড়ে ওঠে মন্দির। তখন থেকেই চলছে গাজন মেলা। ধীরে-ধীরে বেড়েছে ভক্ত সমাগম। এখন মধুসূদন বেরার উত্তরসূরি হিসেবে নিরুপমা বেরা, নির্মলা বেরা ও অশোক বেরার পরিবার বছরান্তরে এই উৎসবের দায়িত্ব পায়। প্রত্যহ পুজো হলেও এই তিথিতে পুজোর জাঁক একটু আলাদাই। খরচ আসে কোথা থেকে? পুজোর দায়িত্বে থাকা অশোককুমার বেরা বলেন, “সরকারি সাহায্য সে ভাবে পাই না। ভক্তদের প্রণামী আর মেলার দোকানিদের থেকে আসা সামান্য টাকায় সারা বছরের খরচটুকু উঠে যায়। মন্দিরের পাশের পুকুর সংস্কার করে দিয়েছে বল্ক অফিস থেকে। একটা শৌচালয়ও গড়ে দিয়েছে।”
মূলত হর-পার্বতী বিয়ে ঘিরেই এই উৎসব। হাজার হাজার মানুষ কুকড়াহাটির হুগলি অথবা হলদিয়ার হলদি নদী থেকে জল নিয়ে শিবের মাথায় ঢালে। চলে মন্দির প্রদক্ষিণ। রাতভর জল ঢালার পরদিন রাতে হয় হর-পার্বতীর বিয়ে। এরপর দেবতার ভর পাওয়া এক পুরুষকে নতুন বস্ত্র পরিয়ে কালী নৃত্য দেখানো হয়। পুরোহিত সঙ্কর্শন উত্থাসীনি জানান, শিবের পুজোয় বিশেষ কোনও পার্থক্য না থাকলেও এই বিয়েটাই মুখ্য।” |
|
|
|
|
|