জলসঙ্কটে দুরমুঠ
দশ লিটার জল আনতে লাগে পাঁচ টাকা
০ লিটার পানীয় জলের একটি জ্যারিক্যান ভ্যান রিকশায় বয়ে আনতে খরচ পড়ে ৫ টাকা। একটু ঘুরিয়ে বললে ১০ লিটার পানীয় জলের দাম ৫ টাকা। উপায় না থাকায় এই ভাবেই জল আনতে বাধ্য হচ্ছেন কাঁথি ৩ ব্লকের দুরমুঠ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরমুঠ, চাঁদবেড়িয়া, বাঘাদাঁড়ি, বেতালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। চার কিলোমিটার দূরের দইসাই গ্রাম বা ৬ কিলোমিটার দূরের কাঁথি মহকুমা শহর থেকে জল আনতে হয় তাঁদের। কেউ কেউ অবশ্য সাইকেলে করেই জল নিয়ে আসেন। কখনও আবার গ্রামের ১০-১৫টা বাড়ির জল একসঙ্গে আসে ভ্যান রিকশায়।
দুরমুঠের এই এলাকা লবণাক্ত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। ‘নন-টিউবওয়েল’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। গ্রামগুলির কয়েক হাজার মানুষের পানীয় জলের একমাত্র অবলম্বন ছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) জল সরবরাহ প্রকল্প। কয়েক দশক আগের সেই জল সরবরাহ ব্যবস্থা সময়ের সঙ্গে ভেঙে পড়েছে অনেক দিন। এই অবস্থায় ২০১০-১১ আর্থিক বছরে কাঁথি মহকুমায় জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পে পরিস্রুত পানীয় সরবরাহের প্রকল্প ঘোষিত হয়। এক একটি জল সরবরাহ প্রকল্পে ১২ থেকে ১৫টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই মতো দু’বছর আগে দুরমুঠে জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পে একটি পাম্প হাউসও তৈরি হয়। তবে, বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে তা আজও তা চালু হয়নি। একই অবস্থা কাঁথি ৩ ব্লকের মুড়িসাই, শঙ্করপুর, দেশপ্রাণ ব্লকের চণ্ডীভেটি, কাঁথি ১ ব্লকের সাহেবখানবাড়, খেজুরি ১ ব্লকের মুকুটশীলা-সহ আরও ১৪টি জল সরবরাহ প্রকল্পের।
এই ভাবেই বয়ে আনতে হয় পানীয় জল।—নিজস্ব চিত্র।
তাই বিপিএল থেকে এপিএল প্রত্যেককে বছরভর জল কিনতে হয়। অথবা চার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দইসাই গ্রাম বা ৬ কিলোমিটার গিয়ে কাঁথি মহকুমা শহর থেকে জল বয়ে আনতে হয়। যাঁরা সেটুকুও পারেন না, পুকুর থেকে জল তুলে ফুটিয়ে খান। গরম বাড়তে পুকুরগুলিও শুকিয়ে আসায় সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। দুরমুঠ গ্রামের প্রীতি মাইতি, বেতালিয়ার রূপচাঁদ খান, বাঘাদাঁড়ির দীপঙ্কর মণ্ডলরা বলেন, “আমাদের তো আর পাঁচটা কাজের পাশাপাশি খাওয়ার জন্য পুকুরের জলই ভরসা। পুকুরের জলে ফিটকিরি মিশিয়ে, অথবা ফুটিয়ে খাই। যাঁদের সঙ্গতি আছে তাঁরা কিনে আনে অথবা চার থেকে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে জল বয়ে আনে।”
প্রাথমিক স্কুলেও মিড-ডে মিলের রান্না হচ্ছে পুকুরের জলে। দুরমুঠের গুয়াগেছিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কালীপদ সিংহ ও শ্যামসুন্দর পণ্ডাদের মন্তব্য, “পানীয় জলের অভাবে সব কিছুই পুকুরের জলেই সারতে হয়।” বহিত্রকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, “সেই কয়েক দশক আগে পিএইচ-এর জল সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এখন মাটির নীচে চলে যাওয়া পাইপ খারাপ হয়ে, কোথাও বা চুরি হয়ে গিয়েছে। ফলে জল সরবরাহ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।”
কিন্তু নতুন পাম্প হাউসে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না কেন?
কাঁথির জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুবীরকুমার ঘোষ বলেন, “পাম্প হাউসগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য ২০১১-১২ আর্থিক বছরে বিদ্যুৎ দফতরে টাকা জমা দেওয়া হলেও তারা সংযোগ দেয়নি। এ জন্যই পাম্প হাউসগুলি চালু করা যাচ্ছে না। ব্যাহত হচ্ছে জল সরবরাহও।” বিদ্যুৎ দফতরের কাঁথি বিভাগের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণকুমার মাইতি বলেন, “বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সফর্মার না-থাকার জন্য সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কিছু দিনের মধ্যেই ট্রান্সফর্মার চলে আসছে। এলেই সংযোগ দেওয়া হবে।” অবশ্য তাঁর পাল্টা অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বিদ্যুতের জন্য আবেদন করলেও অধিকাংশ পাম্প হাউসগুলিতে ওয়্যারিং এর কাজই হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন জানান, জল সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদ থেকে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তর দফতরে জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.