ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের শেষ আই লিগ ম্যাচ সুখের হল না। চোদ্দো কোটির ইস্টবেঙ্গলের কপালে শেষ পর্যন্ত জুটল থার্ড বয়ের ‘সম্মান’!
লাল-হলুদে কোচিং জীবনের এক হাজার সতেরো দিন রবিবার পূর্ণ করলেন মর্গ্যান। সে জন্য তাঁকে এ দিন এক হাজার সতোরোটি গোলাপের মালায় বরণ করে নেন কল্যাণী স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চমকপ্রদ এই শুভেচ্ছা পেয়েও সাহেব কোচের হাসি মিলিয়ে গেল ম্যাচের শেষে।
হেরে আই লিগে চার নম্বরে শেষ করলেন চিডি-মেহতাবরা। কিন্তু লিগের দুটি ম্যাচের একটিতেও পাহাড়ের দলটিকে হারাতে পারল না মর্গ্যানের ছেলেরা। লাজং এফসির কাছে অপ্রত্যাশিত ভাবে ম্যাচ হারার পর অবশ্য মর্গ্যান বা তাঁর দলের ফুটবলারদের মতোই মাঠে উপস্থিত সমর্থকদের কারও মধ্যে কোনও হা-হুতাশ ছিল না। স্টেডিয়াম ছেড়ে টিম বাসে ওঠার আগে চিডি যেমন বলছিলেন, “আই লিগটাই তো পেলাম না। লাজং ম্যাচে হারের জন্য আলাদা করে কী আফসোস করব!”
|
রবিবার শহরে নিজের বাড়িতে সুভাষ ভৌমিক। |
আর চিডির কোচ মর্গ্যান পরিষ্কার বলেও দিলেন, “এই ম্যাচের ফল নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমার কাছে এই মুহূর্তে এএফসি কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্যই আমি এ দিন রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের খেলিয়েছি।”
১৫ মে যুবভারতীতে এ এফ সি কাপের ম্যাচের চেয়েও মাঠে উপস্থিত লাল-হলুদ সদস্য-সমর্থকরা অবশ্য কলকাতা লিগ নিয়েই বেশি চিন্তিত মনে হল। বিশেষ করে ২৩ মে-র কলকাতা ডার্বি। মর্গ্যান জমানায় পর পর তিন বার আই লিগ হাতছাড়া! এ বার রানার্সও জুটল না। তাতে কী? কলকাতা লিগ জিতলেই যে লাল-হলুদ সমর্থকরা খুশি। যা সত্যিই বিস্ময়ের।
শনিবারই রানার্স হওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিল পুণে এফসি। ফলে তিন নম্বর স্থানটি পাকা করেই এ দিন মাঠে নেমেছিল মর্গ্যান বাহিনী। স্বভাবতই ম্যাচটি ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষার। সে জন্য দ্বিতীয় টিম খেলান লাল-হলুদ কোচ। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে বসে পায়ে মরচে ধরে যাওয়া রবিন সিংহ, সুবোধ কুমার, বলজিৎ সাইনিদেরও নামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দলবদলের বাজারের মধ্যেও ভাল খেলার তাগিদ চোখে পড়ল না কারও মধ্যেই। রবিন, মননদীপ, বলজিতকে ফরোয়ার্ডে রেখে ৪-৩-৩ স্ট্র্যাটেজিতে টিম নামিয়েছিলেন মর্গ্যান। কিন্তু মাঝমাঠে মেহতাব আর পেনের না থাকা এবং রক্ষণে সৌমিক, ওপারাদের অভাব ঢাকতে পারল না রিজার্ভ বেঞ্চ। |
কল্যাণীতে হেরে মর্গ্যান। |
এ ভাবেই আটকে গেল ইস্টবেঙ্গল। |
|
ম্যাচের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ আর রক্ষণের বোঝাপড়ার ফাঁক খুজে নিয়ে লাজংয়ের তাইসুকে তিন জন ফুটবলারকে কাটিয়ে দুরন্ত গোল করে লাজংকে এগিয়ে দেন। কিন্তু এর পর প্রায় ৮২ মিনিট সময় পেয়েও গোল করতে পারেননি মর্গ্যানের ফুটবলাররা। তবে সুযোগ যে বলজিৎ, রবিনরা পাননি তা নয়। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন দু’জনই। দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ছবি বদলায়নি। বরং অভিজিৎ দু’টি নিশ্চিত গোল না বাঁচালে আরও বড় ব্যাবধানে হারতে হত ইস্টবেঙ্গলকে।
সন্ধ্যা নামার আগে কালবৈশাখীর দাপটে স্টেডিয়ামে অন্ধকার নেমে এসেছিল। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে। অন্ধকারের মধ্যেই ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিম বাসে উঠছিলেন চিডি-পেন-বরিসিচরা। স্টেডিয়ামের অন্ধকার যেন প্রতীক হয়ে রইল ইস্টবেঙ্গলের আই লিগের এ বারের পারফরম্যান্সের।
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, রাজু, গুরবিন্দর, অর্ণব, রবার্ট, ভাসুম, সুবোধ, লোবো, রবিন (চিডি), মননদীপ (পেন), বলজিৎ (বরিসিচ) |