সম্পাদকীয় ২...
ছুটি ও কাজ
বীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিয়াছিলেন, “নিরুদ্যম অবকাশ শূন্য শুধু, শান্তি তাহা নয়।” যে কাজে সত্যের প্রকাশ, তাহার মধ্য দিয়াই শান্তিকে চিনিবার কথা বলিয়াছেন তিনি। তাঁহার বিপুল পরিমাণ রচনা, এবং সুবিশাল কর্মকাণ্ড দেখিলেও তাহা বোঝা যায়। তাঁহার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন তাঁহার নির্দিষ্ট ‘শান্তি’-র সংজ্ঞাই গ্রহণ করিয়াছে এ বছর। তাঁহার প্রতি শ্রদ্ধা জানাইতে ২৫ বৈশাখ দিনটি কাজের মাধ্যমে পালন করা যথোপযুক্তই হইয়াছে। এই অভিপ্রায় অবশ্য উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত পূর্বেই প্রকাশ করিয়াছিলেন। কিন্তু এ দেশে সদিচ্ছার সহিত সৎকার্যের দূরত্বটি বড় কম নহে। যাহা সহজ কর্তব্য, দুস্তর বাধা পার করিয়া তাহা সাধন করিতে হয়। এ বার পঁচিশে বৈশাখ প্রভাতে উপাসনায়-সঙ্গীতে-পাঠে রবীন্দ্র-জন্মোৎসব পালন করিয়া সকলে নিজ নিজ আসনে ফিরিয়া গিয়া অন্য দিনের মতোই কাজ করিয়াছেন, ইহা অত্যন্ত শোভন হইয়াছে। হয়তো কর্মতৎপরতার ছবিটি বিশ্বভারতীর সর্বত্র সমান ভাবে দেখা যায় নাই। তাহাতে ক্ষুণ্ণ হইলে চলিবে না। কোনও পরিবর্তন সকলে সমান আগ্রহে মানিবেন, এমন আশা করা চলে না। কর্মের দ্বারা শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের এই দৃষ্টান্ত বিশ্বভারতী ও তাহার সহিত সম্পৃক্ত বিদ্যালয়গুলি ক্রমশ গ্রহণ করিবে, এবং শান্তিনিকেতন হইতে তাহা বাকি রাজ্য গ্রহণ করিবে, সেই সম্ভাবনার সূচনা এই বৎসর হইল। ইহাও বড় কম প্রাপ্তি নহে।
অনেকেই হয়তো শঙ্কিত হইতে পারেন, ছুটির মূল্য কি তবে কমিল? ছুটির মধ্যে যে মুক্তির আনন্দ রহিয়াছে, তাহা তো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বার বার বলিয়াছেন। ছুটি যে বাঁশি বাজাইয়া আসে, ‘আজ আমাদের ছুটি’ এই আনন্দের সুরটি যে আমাদের হৃদয় হইতে উৎসারিত হইয়া আকাশে-বাতাসে প্রতিধ্বনিত হইতে থাকে, তাহা কবির অধিক কে বুঝিয়াছে? দৈনন্দিন নিরানন্দের শৃঙ্খলকে তিনি প্রবল অপছন্দ করিতেন। কিন্তু ‘যে কর্মে রয়েছে সত্য’ তাহার সাধনায় অজস্র পরিশ্রম করিয়াছেন বার্ধক্যেও। কাজ যদি কর্মীর নিকট অর্থবহ না হয়, তবে তাহা করিয়া সার্থকতার বোধ হইবে কী করিয়া?
আজ অধিকাংশ মানুষের নিকট ‘কাজ’ জীবিকার উপায় মাত্র। তাহার সহিত জীবনের সম্পর্ক নাই, অন্তরের যোগ নাই। নিরুদ্যম অবকাশের মতো, উদ্যমহীন কাজও ‘মিথ্যা’। কাজে অনাগ্রহ বস্তুত নিজের সহিত, অপরের সহিত মিথ্যাচারের প্রতি স্বাভাবিক অনীহা। নিজের কাজ যখন নিজের পরিচয় হইয়া দেখা দেয়, তখনই তাহা সত্য। কর্ম যখন আগ্রহের অভিব্যক্তি, কেবল প্রাণহীন নিয়মানুবর্তিতা নহে, তখন তাহাকে ‘কর্মসংস্কৃতি’ বলা যাইতে পারে। তেমন কাজ করিতে পারিলে কাজ হইতে পালাইতে ছুটির প্রয়োজন হইবে না। গানের তাল-ফাঁকের মতোই, ছুটির দিনগুলি আসিবে কাজের পরিপূরক হইয়া। বিশ্বভারতী সেই পরিবর্তনের পথ দেখাইতে পারিলে মঙ্গল। আশা করা যায়, পঁচিশে বৈশাখে ছুটি না দেওয়ার এই সিদ্ধান্তটি যথার্থ কর্মসংস্কৃতির বোধ জাগ্রত করিবে। সারা বছর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.