|
|
|
|
হুল্লোড় |
স্মিতা-শাবানার যুগটাই ছিল আলাদা |
জাতীয় পুরস্কার পেলেন এ বার! অফিশিয়াল সিলেকশনসহ কান-এর রেড
কার্পেটেও তিনি। তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে কথোপকথনে প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
এই নিয়ে তিন বার আপনার ছবি কান-এ... হ্যা।ঁ তবে এই প্রথম আমার কোনও ভারতীয় ছবি অফিশিয়াল সিলেকশনে আছে। প্রথম বার ফ্লোরিয়ান গ্যালেনবার্গারের ‘শ্যাডোস অব টাইম’। জার্মান ছবি। তার পর ছিল একটা ব্রিটিশ শর্ট ফিল্ম। এ বার ‘মনসুন শ্যুটআউট’। পরিচালক অমিত কুমার ছিলেন ফ্লোরিয়ানের সহকারী। অমিতের কাজের ধারাটা আমার খুব সুন্দর লাগে। অনুরাগ কাশ্যপ বলেছিল যে ‘মনসুন শু্যটআউট’-এর চিত্রনাট্যটা ওর পড়া সব চেয়ে ভাল চিত্রনাট্য। আমিও একমত। একটা কপ-গ্যাংস্টার ছবি। তবে অন্য চর-পুলিশের ছবির মতো এটা নয়। কেন একজন অপরাধী তৈরি হয়? সেই মনস্তাত্ত্বিক নিরীক্ষাটাও আছে।
কী পরছেন কান-এর রেড কার্পেটে? শাড়ি দেখতে খুব সুন্দর। তবে আমি মনে করি, শাড়ি এখনও আন্তর্জাতিক রেড-কার্পেট পোশাক হয়ে উঠতে পারেনি। আমি গাউন পরছি। নীলচে একটা সি-গ্রিন গাউন। অস্ট্রেলিয়ান ডিজাইনারের তৈরি।
‘দেখ সার্কাস দেখ’-এর জন্য স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেলেন জাতীয় পুরস্কারের। মনে আছে কত বছর আগে সার্কাস দেখেছেন? ‘দেখ সার্কাস দেখ’ ছবিটা করতে গিয়েই তো সার্কাস দেখেছি। ছবিটার মধ্যে একটা সার্কাস দলকে দেখানো হয়েছে। তবে আলাদা করে সার্কাস দেখার জন্যই গিয়েছি সেই ছোটবেলায়। আমরা তখন অস্ট্রেলিয়াতে থাকতাম। দিদু আর ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করতে আমরা দেশে আসি। তখন মনে আছে সবার সঙ্গে গিয়ে রাশিয়ান সার্কাস দেখেছিলাম দিল্লিতে।
সেই সার্কাস আর আজকের দিনের সার্কাসের মধ্যে তফাত কিছু পেলেন? সেই সার্কাস-এ আসল প্রতিভা ছিল। তখন তো ট্রাপিজের খেলায় নীচে কোনও নেট-ও থাকত না। মনে আছে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলতাম এই ভেবে যে যদি কেউ উপর থেকে পড়ে যায়! এখন কিন্তু একদম আলাদা। সেফটি নেট রয়েছে বলেই কিনা জানি না, তবে এটা ঠিক যে ট্রাপিজের খেলায় প্রায়ই তো জিমন্যাস্টরা পড়ে যায়। |
|
তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় |
কোনও দিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রসঙ্গে ‘সার্কাস’ কথাটা ব্যবহার করেছেন?
এ দেশে তো সার্কাস কথাটা অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা সে রাজনৈতিক পটভূমি হোক বা অন্য কিছু। ক্লাউন শব্দটা খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সেটা অভিনেতাদের জীবনেও প্রাসঙ্গিক। অনেক সময় মনে হয় যেন একটা ব্ল্যাক কমেডি হচ্ছে। আর অনেকেই তো রাজ কপূরের অভিনীত জোকারের মতো হাসি দিয়ে দুঃখ আড়াল
করে রাখছে।
আর একটু বিস্তারিত ভাবে বলবেন? এই ধরুন যে ভাবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলাদের জায়গা দেওয়া হয়।
আজও কেন সেটা বলছেন? অভিনয় করার সময় কি আপনি নিজের মতটা পরিচালককে জানান? আমার কাজ হল ভাল অভিনয় করার চেষ্টা করা। সেটাই করি। কিছু পরিচালক চান যে আমি আমার ক্রিয়েটিভ ইনপুটস দিই। কেউ কেউ সেটা চান না। যখন বুঝি যে সেটার প্রয়োজন নেই, আমি আর মাথা ঘামাই না। মহিলা হয়ে সেটা করলে ভুল বোঝার সম্ভাবনা বেশি। বিতর্কে না জড়িয়ে বরং আমি অন্য কিছুতে নিজের ক্রিয়েটিভিটি দেখাই।
আপনার সম্পর্কে এটা শোনা যায় যে আপনি ভাল অভিনেত্রী, কিন্তু বেশ ‘আর্টি’... কত কী যে শুনি... আমার অভিনয়ের ধারাটা একটু পাশ্চাত্য ঘেঁষা। বেশ সূক্ষ্ম আর অন্তর্মুখী। তার বিপরীত ধারা হল ‘লাউড অ্যান্ড অবভিয়াস’ অভিনয়। আমি কিন্তু দু’টোই করতে পারি। তবু আমাকে বারবার লেবেল দেওয়া হয় যে আমি নাকি ‘প্রিন্সেস অব প্যারালাল’। অথবা বলা হয় আমি বেশি ‘রিয়েল’ অভিনয় করি। এ প্রসঙ্গে বলব যে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি প্যারালাল ছবির অভিনেত্রীদের সে রকম জায়গা আজও দেয় না যেটা ভাল পুরুষ অভিনেতাদের দিয়ে থাকে। ভাল অভিনয় করে ওরা সবাই। তবে জনপ্রিয়তার নিরীখে ওরা ভাল মহিলা অভিনেত্রীদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে।
কেন? শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল? ওঁরা তো ভাল অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন... ওঁদের প্রথম দিকের ছবিগুলো এনএফডিসি প্রযোজনা করেছিল। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন আর্টকে সমর্থন করা হত। বিশ্বের সব জায়গাতেই জনগণের টাকাই শিল্পকে টিকিয়ে রাখে। এমনকী চিনের মতো একটা দেশেও এটাই সত্যি। ভারতে বহু বছর এই স্টেট ফান্ডিংটা আর হয় না। সবই বাজারভিত্তিক, লাভই যেখানে শেষ কথা। সেটা কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই ভাল নয়। তখন দুর্নীতি ঢুকে পড়ে। কোয়ালিটির বদলে সবাই শুধু চিন্তা করে কোয়ান্টিটি নিয়ে। আর একটা ব্যাপার। আমাদের দেশের বেশির ভাগ পরিচালকই পুরুষ। তাঁরা খুব কম ক্ষেত্রেই মূল ধারার ছবিতে মেয়েদের কথা ভেবে চরিত্র লেখেন। সুজয় ঘোষ করেছেন। এখন ‘গুলাব গ্যাং’ ছবিতেও দেখছি সেটা করা হয়েছে। এই দু’একটা প্রজেক্ট ছাড়া মূল ধারার ছবিতে তো বেশিরভাগ অভিনেত্রী ফ্যান্টাসির জন্যই ব্যবহৃত হন। আর এটা সারা বিশ্বেই প্রযোজ্য।
মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে ‘গুলাব গ্যাং’ করলেন। তার পর আবার সানি দেওল আর কঙ্গনা রনাওয়তের সঙ্গে একেবারে বাণিজ্যিক ছবি। এই সব কি ইমেজ বদলানোর খাতিরে? আমি ছোট থেকেই মাধুরী দীক্ষিতের ফ্যান। কাজ করে আরও ভাল বুঝলাম কী বড় মাপের অভিনেত্রী উনি! ওই হাসি, ওই কমিক টাইমিং, আর ওই রকম নাচ দিস ইজ হোয়াট মেকস মাধুরী দীক্ষিত। ছবিতে মাধুরী একটা গ্যাং চালান। তার সদস্য আমি। মাধুরী হ্যাজ আ ডান্সার্স স্কিল অ্যান্ড অ্যান অ্যাক্টর্স বডি। লম্বা লম্বা নাচের সিন একবারে শু্যট করেন। নিজের স্টান্ট নিজে করেন। এই বয়সে, এত ছবি করেও, কোনও কিছুতেই না নেই। টেকনিক্যাল জাগলারির ব্যবহার নেই। যা ছবিতে দেখবেন, জানবেন সব কিছু ওঁর করা। ওঁর ছেলেরা সেটে এসেছিল এক দিন। শি ইজ সাচ আ গুড মাদার। আর সানি দেওলের সঙ্গে কাজ? ওটা দারুণ এনজয় করেছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে লাউড অভিনয় মানেই খারাপ অভিনয়।
আপনি বলছেন এটা? মূল ধারার ছবিতে অভিনয় করার যুক্তি হিসেবেই কি বলছেন এটা? না। একদম নয়। মেলোড্রামা হচ্ছে একটা সুন্দর প্রকাশভঙ্গি। আমরা শহুরে মানুষ বলে পোশাকি অভিব্যক্তি দিই। আমার মা-কে দেখি কিছু কিছু ক্ষেত্রে কী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। মা-কে খেপিয়ে বলি: ‘এত মেলোড্রামাটিক হোয়ো না।’ কিন্তু বুঝি যে মা’র প্রতিক্রিয়াটা বেশ স্বতঃস্ফূর্ত।
এই রকম বাস্তব প্রতিক্রিয়া যদি ছবিতে হয়, সেটা নিয়ে সমস্যাই নেই। সমস্যা হয় যখন মেলোড্রামাটা বেশ বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। আর এটাও বলি যে সূক্ষ্ম অভিনয় বলে যা অনেক সময় বোঝানো হয়, তার মানেই কিন্তু ভাল অভিনয় নয়। |
|
মাধুরী দীক্ষিত |
কেন বলছেন এটা? অনেকে আছে যারা কোনও অভিনয়ই করতে পারে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। দৃশ্যের পর দৃশ্যে একটা ডেড লুক। সেটা মোটেই ভাল অভিনয় নয়। ভাল, সূক্ষ্ম অভিনয় তখনই হয়, যখন উপরে কোনও প্রতিক্রিয়া থাকে না কিন্তু ভেতরে এনার্জি থাকে। অভিনেতা সেই এনার্জিকেই ব্যবহার করেন। এটাই ওয়াং কার ওয়াই-এর ছবিতে হয়। হলিউডেও কিন্তু সূক্ষ্ম অভিনয় সব সময় হয় না। তবে ওরা আমাদের থেকে বেশি সূক্ষ্ম। আসলে এটা পুরোটাই নির্ভর করে সংস্কৃতি আর সিনেমার প্রয়োজনীয়তার উপর। ঋত্বিক ঘটক মাঝে মাঝে মেলোড্রামাকেও এমন ভাবে ব্যবহার করেছেন যে সেটাও আমার চোখে বাস্তব বলে মনে হয়েছে। যেমন ‘মেঘে ঢাকা তারা’র সেই সংলাপ: ‘দাদা, আমি বাঁচতে চাই!’ কী অভিব্যক্তি! কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’য় দেখুন। আলাদা স্টাইল। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের চাউনি দেখুন। ব্ল্যাঙ্ক নয়। অন্তর্নিহিত এনার্জি রয়েছে। সেটাই শ্রেষ্ঠ সূক্ষ্ম অভিনয়।
কান থেকে ফিরে এসে আবার একজন বাঙালি পরিচালকের ছবি করছেন... হ্যা।ঁ পার্থ সেনগুপ্তর ছবি ‘সানরাইজ’। ওই ছবির জন্য মরাঠি ভাষাটা শিখছি। আমার চরিত্রটি এক মায়ের। সন্তান হারানোর পর তার সময়ের জ্ঞানটা চলে গিয়েছে। এই ভাবটা প্রকাশ করতে হবে অভিনয় না করে। ছোটবেলায় এই রকম এক মহিলাকে দেখেছিলাম। প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তার ব্যবহারের কথা মনে পড়ছে। এটা শেষ করে একটা ব্রিটিশ ছবি করছি। নাম ‘ফিস্ট অব বারাণসী’।
‘ব্রিক লেন’, ‘আনা ক্যারেনিনা’ করলেন। হলিউড অভিনেত্রী লুসি লিউয়ের সঙ্গেও কাজ করেছেন। অনেক দিন বাংলা ছবি করছেন না কেন? অনেকে হয়তো মনে করেন না যে আমি বাঙালি অভিনেত্রী। আমি তো কলকাতায় মানুষ হইনি। তাই হয়তো সে রকম কোনও ভাল অফারই আসেনি। এলে নিশ্চয়ই ভেবে দেখব।
শোনা যাচ্ছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করছেন? এখনও ফাইনালাইজ হয়নি।
|
|
|
|
|
|