|
|
|
|
বাঙালি শুনবে হেমন্ত, বেরিয়ে এসে বলবে ডোভার লেনে ছিলাম |
নতুন ব্যোমকেশ বেছেছেন। নতুন চিন্তা করছেন। তবু পুরনো নিঃসঙ্গতা
আজও ছেড়ে যায়নি নতুন অঞ্জন দত্ত-কে। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায় |
আবার সেই ‘ফ্লুরিস’, আবার আপনার ইন্টারভিউ। হ্যাঁ, গত বছর ‘দত্ত ভার্সেস ইন্ডাস্ট্রি’ ইন্টারভিউটা দেওয়ার পর যা হল। মাই গড, অনেকেই ভীষণ রেগে গিয়েছিল- টোনি, ঋতু, সৃজিত, কৌশিক। পরে অবশ্য ওদের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার।
এখন সবার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক? হ্যাঁ, এখন সব ঠিক । ভাই, এটা শো-বিজ এখানে আপনাকে নিয়ে কনট্রোভার্সি, গসিপ, বদনাম হবেই। আমার এই ডিবেটগুলো বেশ ভালই লাগে জানেন। তাতে আপসেট হওয়ার কী আছে। শো-বিজে থাকব গায়ে কাদা মাখবো না, এ আবার হয় নাকি। যত সব ছেঁদো যুক্তি।
এখন কী করছেন? পপুলিস্ট ফিল্ম বানানোর দিকে মন দিয়েছি। সেটাই আমার প্রধান লক্ষ্য। ‘গণেশ টকিজ’ বলে একটা ফিল্ম শেষ করলাম রাইমা (সেন) আর চন্দন রায় সান্যালের সঙ্গে। ওটা জুনে রিলিজ করবে। মোট কথা আমি ঠিক করেছি, এ বার পপুলার কমার্শিয়াল পৃথিবীতে আমাকে ঢুকতেই হবে। ওটাই ফিউচার।
হঠাৎ এ রকম খেয়াল হল কেন? আমার মনে হয়েছে কারণ বনগাঁতে গিটার নিয়ে যখন আমি গান গাই পুরো হল তো ভর্তি থাকে। তা হলে বাংলা সিনেমাতেই শহরের দর্শক আর মফস্সলের দর্শকএই আজগুবি বিভেদটা কেন থাকবে? শিলিগুড়ি, আসানসোল, মেমারিএই দর্শকদের আমাকে অ্যাড্রেস করতেই হবে। সৃজিত, কৌশিক, রীনাদি- সবাই এ বার এই মার্কেটটাই ধরতে চাইছে।
ওটা তো রাজ চক্রবর্তীর মার্কেট? হ্যাঁ, আমি রাজ চক্রবর্তী হতে চাই। এই মার্কেটটা রাজ আর রবি কিনাগীদের মার্কেট, কিন্তু তার মানে তো এটা নয় যে ওটাতে ওদের একার আধিপত্য থাকবে। সেটা হেল্দিও নয়। |
 |
এটা তো বড় নিউজ? হ্যাঁ, আমি নিউ এজ বাংলা ছবি নয়, নিউ এজ কমার্শিয়াল বাংলা ছবিতেই কনসেনট্রেট করতে চাই। আমি বৃহত্তর বাংলার জন্যই ছবি করব, শুধু কলকাতার জন্য নয়। মরবার আগে আই ওয়ান্ট টু বি আ পার্ট অব দিস। কিন্তু যে বিভেদের কথা আপনি বলছিলেন, শহর আর মফস্সলের- আপনার ভাল বন্ধু অপর্ণা সেন তো সম্প্রতি সেটা অ্যাকনলেজ করলেন।
কী অ্যাকনলেজ করল রীনাদি?
এই যে মফস্সললের হলে ‘গয়নার বাক্স’র ২৬ মিনিট কাটা হল, সেটা তো শহর আর মফস্সলকে আলাদা করা। আমি জানি না কেন রীনাদি করল। করা উচিত হয়নি। আমার তো পুরো ফিল্মটাই দারুণ লেগেছে।
ফিল্মটা রিলিজ হওয়ার পর শুনেছিলাম আপনি অনেক পরিচালককেই ফোন করে বলেছিলেন ছবিটা আপনার ভাল লাগেনি একদম? আমি বলেছি?হ্যাঁ, অন্তত তিন জন পরিচালক আমাকে তাই বলেছিলেন। কিন্তু পরে দেখলাম আপনি প্রেসে উল্টো কথা বলছেন?
না না, আমি কোনও দিন বলিনি। আমার ‘গয়নার বাক্স’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’য়ের থেকেও বেশি ভাল লেগেছে। অনেক দিন পর রীনাদি একটা জমজমাট ছবি বানাল। ওই যে বলছিলাম, আমার এখন পপুলিস্ট জিনিস ভাল লাগছে।
‘ভূতের ভবিষ্যৎ’য়ের মতো? হ্যাঁ, কিন্তু ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’কে নিয়ে অনেকে যে রকম শ্রেষ্ঠ ছবি- শ্রেষ্ঠ ছবি বলে লাফাচ্ছিল ততটা শ্রেষ্ঠ কিন্তু আমার মনে হয়নি। নতুনত্ব ছিল ঠিকই, কিন্তু অত মাতামাতি কেন হল বুঝিনি।
‘গণেশ টকিজ’ ছবিটা কী নিয়ে? ‘গণেশ টকিজ’ মেনস্ট্রিম বাণিজ্যিক ছবি। এটা দু’টো কমিউনিটিকে নিয়ে বানানো বাঙালি আর মারোয়াড়ি। দু’টো কমিউনিটি একে অপরকে গালাগালি করে কিন্তু একে অপরকে ছাড়া চলে না। এই প্রেম আর হেট্রেড নিয়ে মজার মিষ্টি ছবি। ছবিটার পঞ্চাশ শতাংশ আবার হিন্দিতে।
এটা তো আপনার জন্য ইম্পর্ট্যান্ট ছবি। ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ তো চলেনি। চলেনি মানে কিছুই চলেনি। ইট’স দ্য বিগেস্ট ফ্লপ অব মাই কেরিয়ার। ইট ওয়াজ আ ডিজাস্টার অ্যাট দ্য বক্স অফিস।
 |
নতুন ব্যোমকেশ |
 |
পুরনো ব্যোমকেশ |
কেন এ রকম হল? বড্ড ব্যক্তিগত হয়ে গিয়েছিল ছবিটা। দর্শকরা আইডেন্টিফাই করতে পারল না। আমি আজও মনে করি আমার বানানো অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’। কিন্তু দর্শককে তো আইডেন্টিফাই করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ওঁদের কৌতুহলই বা কেন থাকবে। আমার স্ত্রী চন্দা কিন্তু বলেছিল ছবিটা চলবে না একদম।
আচ্ছা, এ বার বড় কয়েকটা খবর দিন তো। বলুন।
আবির (চট্টোপাধ্যায়) তো চলে গেল ফেলুদা করতে? (হেসে) হ্যাঁ, চলে গেল।
কী ভাবে বলল আপনাকে ওঁর ডিসিশনের কথা? সামনাসামনি তো বলেনি। জাস্ট একটা এসএমএস করে জানিয়ে দিল।
খারাপ লাগেনি? (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ, খারাপ লেগেছে। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কী আর করা যাবে।
শোনা যাচ্ছে আপনি আবিরের রিপ্লেসমেন্ট পেয়ে গিয়েছেন? (হেসে) আমি জানি না কিছুই।
আপনি না জানলে কে জানবে। শুনছি প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্তের নতুন ব্যোমকেশ? আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না। আর কিছু দিনের মধ্যেই জেনে যাবেন। এইটুকু জানি, ব্যোমকেশ বদলালে অজিতও বদলাবে।
মানে শাশ্বত আর অজিত নয়? আমার তো লজিকালি তাই মনে হয়। যদি ব্যোমকেশ বদলায়, অজিত, সত্যবতীকে তো বদলাতেই হবে। দেখি, এখনও কথা বলিনি শাশ্বতর সঙ্গে। ও কী ভাবছে জানতে হবে।
শাশ্বতর সঙ্গে তো আপনার সম্পর্ক এখন খুব খারাপ। আপনার লেটেস্ট ব্যোমকেশের জন্য তো ও ডেটই দিচ্ছিল না? না, না। আমার সঙ্গে তো কোনও ঝামেলা নেই।
এই ছবিটা তো রিলায়্যান্স প্রোডিউস করছে? হ্যাঁ, রিলায়্যান্স খুব ইন্টারেস্টেড। আমিও ওদের সঙ্গে কাজ করতে খুব উদগ্রীব। সে দিক থেকে দেখতে গেলে অত বড় ব্যানারের সঙ্গে আমি কাজ করিনি কখনও। রাণা, কৌস্তুভ, সবাই ব্রিলিয়ান্ট প্রোডিউসর ব্র্যান্ড ব্যোমকেশ বানাতে ওরা দু’জন যা করেছে, খুব কম প্রোডিউসর করবে। কিন্তু এ বার আমি একটা কর্পোরেট হাউজের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
রিলায়্যান্সের সঙ্গে তো আর একটা ছবি করছেন? (হেসে) কথাবার্তা চলছে।
জিতের সঙ্গে তো? (হেসে) দেখি কী হয়। আমার খুব ইচ্ছে জিতের সঙ্গে কাজ করার। তবে আমি কাজ করলে জিতের স্টার পাওয়ারটা ইউজ করব। স্টারকে গামছা পরিয়ে, চোখে চশমা লাগিয়ে অভিনয় করাব না।
যেমন ঋতুপর্ণ ঘোষ করেন? হ্যাঁ, করেছে ঋতু ও রকম কয়েকটা। কিন্তু আমি করব না। আমার সামনে উদাহরণ হচ্ছে ‘নায়ক’। মানিকবাবু যখন ‘নায়ক’ বানিয়েছিলেন তখন
উনি কিন্তু উত্তমকুমারের স্টারডমটাই ইউজ করেছিলেন। এমনি এমনি তো করেননি। নিশ্চয়ই একটা প্ল্যান ছিল।
ঋতুপর্ণ ঘোষও তো ব্যোমকেশ বানাচ্ছেন... হ্যাঁ, সুজয় করছে। আমার সে দিন কথা হল সুজয়ের সঙ্গে। ঋতুর ছবিতে সুজয়ের লুকটা ভীষণ সেনসিটিভ হয়েছে। কিন্তু ব্যোমকেশ যে রকম শার্প, সেটা হয়নি দেখলাম। তবে ঋতু তো একটা লেভেলে বানাবে ছবিটা। সে বিষয়ে আমি কনফিডেন্ট।
ওটা তো ভেঙ্কটেশ করছে, আপনারটা রিলায়্যান্স। রিলিজের সময় তার মানে একটা বড় শোরগোল হবে? ভাল তো। লড়াইটা রাজায় রাজায় হোক। মাঝখানে বাজে কিছু প্রোডিউসর এসেছিল, তাদের না ছিল কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড, না ছিল কোনও শিল্পবোধ। এরা শেষ করে দিচ্ছিল ইন্ডাস্ট্রিকে।
আপনার কাছে এসেছিল এঁরা? অবশ্যই এসেছিল। আমি কোনও দিন কাজ করব না এদের সঙ্গে। ‘প্রয়াগ’ এসেছিল বাট আই রিফিউজড। আজকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ভেঙ্কটেশ রয়েছে। রিলায়্যান্স, ভায়াকম সবাই ইন্টারেস্টেড। তখন কেউ করে নাকি এদের সঙ্গে কাজ? এদের জন্যই তো ক্ষতি হল আমাদের।
কী রকম? সবাই ফিল্মমেকার হয়ে গেল। সবাই অভিনেতা হয়ে গেল এদের দৌলতে। না আছে তাদের ট্যালেন্ট, না করেছে কোনও কষ্ট। কিন্তু স্টারডমটা চাই। কোয়ালিটি সাঙ্ঘাতিক সাফার করছিল। ভাই, আজকে সৃজিত কিন্তু অনেক স্ট্রাগল করেছে, বুম্বাও বহু স্ট্রাগল করেছে। এ রকম চট করে কেউ ওঁদের স্টার বা ডিরেক্টর বানায়নি। এরা এসে যত সব অ্যামেচারদের দিয়ে কাজ করিয়ে বাজারটা নষ্ট করছিল।
আচ্ছা, এই যে বললেন রাজ চক্রবর্তী হতে চান। সাউথের রিমেক করবেন? আপনি টিভি দেখেন? দেখি।
তা হলে দেখবেন হিন্দি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিন্তু সাউথের রিমেক ছবি হিন্দি ডাব করে দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলাতেও হবে কিছু দিন পর। তখন কী করবেন? তখন তো আর বানাতে পারবেন না রিমেক। আর ম্যাক্সিমাম দু’বছর, তার পর আর সাউথের রিমেক বানানো হবে না এখানে। রাজও তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। রাজ-রবি কিনাগিও কিন্তু নিজেকে বদলেছে। আমাদের সবাইকে বদলাতে হবে।
বিরসা তো বানাচ্ছে রিমেক? আমি এক্সট্রিমলি স্যাড। আশাহত বিরসাকে নিয়ে। নতুন কিছু কেন করবে না ও? বুঝি না।
ই যে আপনার পপুলার হওয়ার চেষ্টা, তাতে তো অনেকেই আপনাকে ক্রিটিসাইজ করবে? বাঙালি এ রকমই। পপুলিস্ট জিনিস বাঙালিরা পছন্দ করে না। বাঙালিরা বাড়িতে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে উত্তম-সুচিত্রা দেখে নাল ফেলবে কিন্তু বাইরে বলবে সত্যজিতের ছবি দেখলাম। একটা ফলস ইন্টেলেকচুয়াল ভাবমূর্তি রাখতে পছন্দ করি আমরা। এটা কেন হবে, পপুলার জিনিস খারাপ নাকি?
খারাপ কেন হবে। কিন্তু বাঙালি নাক সিঁটকোবেই। হেমন্তর ‘এই রাত তোমার আমার’য়ের মতো গান কেউ বানাক তো দেখি। অনুপম, ইন্দ্রদীপ কী নীলের মতো মিউজিক ডিরেক্টররা বানিয়ে দেখাক এ রকম একটা গান।
বাঙালি শুনবে এটা কিন্তু বাইরে বলবে ডোভার লেনটা গত বছর ভাল হয়নি। ‘হাজার টাকার ঝাড়বাতি’ গানটা আজকে কেউ বানাক তো দেখি। এরাই আবার বলে উত্তমকুমার বাজে অভিনেতা। কিছু জানে ওরা! ‘অগ্নীশ্বর’ দেখুক, ‘যদুবংশ’ দেখুক।
আপনার বন্ধু অপর্ণা সেনও তো খুব একটা পপুলিস্ট হতে চান না? হ্যাঁ, রীনাদির পপুলিস্ট হওয়া নিয়ে আপত্তি আছে। কেন হবে সেটা? রীনাদি আমার হার্টথ্রব। এই নিয়ে হুইস্কি হাতে অনেক তর্ক হয়েছে আমাদের।
অভিনয় কি ছেড়েই দিলেন? নাকি এ বার থেকে শুধু পরিচালনাই করবেন... কই, কাজ করছি তো একটা রীনাদির সঙ্গে। সৃজিতের ছবি ‘চতুষ্কোণ’য়ে আমি, রীনাদি, গৌতমদা, ঋতুপর্ণ ঘোষ- চার জনেই অভিনয় করছি। ‘২২শে শ্রাবণ’ নিয়ে আমার প্রবলেম ছিল কিন্তু এই স্ক্রিপ্টটা আমার ভাল লেগেছে।
আর পরিচালনা? পরিচালনা চালিয়ে যাব, কিন্তু এ বার বড় স্টারদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। দিলাম তো ব্রেক অনেককে। আবির হোক, সায়ন হোক, অনুব্রত হোক, পার্নো হোক, পরম হোক, ঋত্বিক হোক। কিন্তু এ বার একটা চেঞ্জ দরকার আমার...
এই ক্রপ অব অ্যাক্টরদের তা হলে আর দেখা যাবে না আপনার ছবিতে? ফর দ্য টাইম বিয়িং নয়। এদের কয়েক জনকে নিয়ে আমি ডিসাপয়েন্টেডও। অনুব্রত যেমন নিজেকে পাল্টালোই না। পার্নো যে কী করে ভগবান জানে, বাট সি হ্যাড দ্য পোটেনশিয়াল। আবির, পরম, ঋত্বিক, এরা একটা জায়গায় পৌঁছেছে।
এঁদের তিনজনের মধ্যে সব চেয়ে ভাল অ্যাক্টর কে? পরম, না আবির, না ঋত্বিক? অবশ্যই পরম। ঋত্বিক আর আবিরকে আরও কাজ করতে হবে। তার পর কমপেয়ার করব।
থ্যাংক ইউ অঞ্জনদা। আশা করি আমাদের কাগজে এ বার আর কেউ আপনার ইন্টারভিউ পড়ে চিঠি লিখে রিঅ্যাকশন দেবে না। (হেসে) হা হা হা হা। |
ছবি: কৌশিক সরকার |
|
|
 |
|
|