পড়শি রাজ্যগুলিই নয়, সারদার আমানতে জমা পড়ত বিদেশি মুদ্রাও।
আমানতকারীর খোঁজে তাদের বিছানো বিস্তৃত জালে ধরা দিয়েছিলেন নেপালের সীমান্ত ছুঁয়ে থাকা গ্রামগুলির বহু মানুষ। স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে সারদা গোষ্ঠীর দার্জিলিং অফিসে তাঁরা নিয়মিত জমা দিতেন অর্থ। তা কখনও ভারতীয় টাকায় কখনও বা নেপালি মুদ্রায়। ভিন্দেশি আমানতকারীদের সুবিধা করে দিতে বিদেশি মুদ্রা জমা নিতেও কার্পণ্য করতেন না সারদা গোষ্ঠীর দার্জিলিং অফিসের কর্মীরা।
সারদার দফতরে বিদেশি মুদ্রা গ্রহণের এই চালু পদ্ধতির কথা শনিবারই নজরে এসেছে পুলিশের। এ ব্যাপারে, বেশ কয়েকজন আমানতকারী, এজেন্ট এবং সারদা-শিলিগুড়ি জোনের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের তিন সদস্য। তদন্তকারীদের সন্দেহ, দার্জিলিঙের ঠিকানা দেখিয়ে নেপালের বহু বাসিন্দা সারদা গোষ্ঠীতে টাকা রেখেছেন।
দার্জিলিংয়ের এক পুরনো বাসিন্দা দেবশঙ্কর শর্মাও শনিবার এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। বস্তুত তাঁর কথার সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্তে নেমেছে।
শিলিগুড়ির বিশেষ তদন্তকারী দলের তিন সদস্যের কাছে দেবশঙ্করবাবু জানান, বছর দুয়েক আগে দার্জিলিঙের ঘুম এলাকায় প্রায় এক কোটি টাকায় তাঁর মা কৃষ্ণা মাইয়ার কাছ থেকে ৬০ কাঠা জমি কিনেছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। তিনি বলেন, “সারদার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ওই জমিতে একটি স্কুল গড়তে চায় তারা। সে কাজে হাতও দিয়েছিল সারদা গোষ্ঠী।” |
তিনি জানান, তাঁর বেশ কয়েকজন আত্মীয়ও সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি নিজেও যে ওই লগ্নি সংস্থায় কিছু টাকা রেখেছেন, মেনে নিয়েছেন তাও। তিনি বলেন, “ওই এজেন্ট এবং আমানতকারীদের অনেকের বাড়িই সীমান্ত ঘেঁষা নেপালের বিভিন্ন জেলায়।” তিনি পুলিশকে জানান, পলিসি’র কিস্তি জমা দেওয়ার সময় তাঁরা নেপালের টাকা এজেন্টদের হাতে জমা দিতেন। সেই টাকাই সরাসরি জমা পড়ত সারদার দার্জিলিঙের দফতরে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দার্জিলিঙের ওই শাখায় গত দুই বছরে ১৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা পড়েছে।
সারদার আমানতে বিদেশি মুদ্রা জমা পড়ার কথা জানতে পেরে এ দিনই সারদা গোষ্ঠীর শিলিগুড়ির আঞ্চলিক অফিসের জেনারেল ম্যানেজার গৌতম চৌধুরীকেও জেরা করে পুলিশ। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি শাখায় কোনও নেপালি টাকা জমা নেওয়া হত না। দার্জিলিঙেও এমন হওয়ার কথা নয়।”
দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালও বিষয়টি শুনেছেন। তিনি বলেন, “গুরুতর অভিযোগ। নেপালি মুদ্রায় লেনদেন মানে বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘন করা। সত্যি হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “নেপালের টাকা জমা পড়ত বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের একটি দল দু-এক দিনের মধ্যেই দার্জিলিং রওনা হবে।”
প্রসঙ্গত, এ দিন শ্যামল সেন কমিশনের দফতরে ৩৮৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে জলপাইগুড়ি থেকে ১০৭টি এবং দার্জিলিং থেকে ১৭০টি অভিযোগ এসেছে। কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে যথাক্রমে ১৯ ও ১৭ এবং ৩৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। মালদা
থেকে এ দিন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, অসমের কোকরাঝাড় থেকে ৩৯টি এবং কামরূপ থেকে ২টি অভিযোগ এসেছে কমিশনের দফতরে।
তবে, শনিবার কলকাতার নিউটাউনে কমিশনের দফতরে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অন্তত ২২৬৬০টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার এই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ২৯ হাজার। |