নিজেদের আয় বাড়াতে ব্যয়বহুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করছে রাজ্যের ইএসআই হাসপাতালগুলি। নতুন চুক্তি হচ্ছে সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে। এই নয়া উদ্যোগ শুরু হচ্ছে ক্যানসারের রেডিওথেরাপি দিয়ে।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, এত দিন ঠাকুরপুকুরের একটি ও বাইপাসের বেলেঘাটা কানেক্টরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে রেডিওথেরাপি নিয়ে চুক্তি ছিল ইএসআই কর্পোরেশনের। ইএসআই প্রকল্পভুক্ত ক্যানসার রোগীদের রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য প্রথম হাসপাতালটি ইএসআই কর্তৃপক্ষের থেকে মাসে ১২ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় হাসপাতালটি মাসে ১৮ হাজার টাকা করে পেত। সেই সমঝোতা এ বার ভাঙছেন ইএসআই-কর্তৃপক্ষ। আগামী এক মাসে তাঁদের নতুন চুক্তি হচ্ছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে। এই সরকারি মেডিক্যাল কলেজে মাসে মাত্র ছ’হাজার টাকাতেই ইএসআই কার্ডপ্রাপ্ত ক্যানসার রোগীদের রেডিওথেরাপি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে, প্রতি মাসে ইএসআই-কর্তৃপক্ষের ৬-১২ হাজার টাকা বাঁচবে।
রাজ্যের ইএসআই ডিরেক্টরেটের কর্তারা জানিয়েছেন, সরকার এখন আর্থিক টানাটানির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রচুর ঋণ। যদি রোগী-পরিষেবায় ধাক্কা না-দিয়ে কিছুটা খরচ বাঁচানো যায়, তাতে সুবিধাই হবে। তাঁদের দাবি, রাজ্যের বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালে এখন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও পরিকাঠামো রয়েছে। অথচ, সেখানে পরিষেবার খরচ যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের অর্ধেক। এই অবস্থায় বেসরকারি জায়গার সঙ্গে চুক্তি করে বেশি পয়সা খরচ করা নিরর্থক।
ইএসআই ডিরেক্টরেটের উপ-অধিকর্তা (পরিকল্পনা) রাজীব গণচৌধুরী জানিয়েছেন, ইএসআই-ভুক্ত কর্মীদের জমানো টাকা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশনের আয় হয়। উল্টো দিকে রাজ্যের জন্য তারা খরচ করে বছরে ১৬০ কোটি। অর্থাৎ, কেন্দ্রের লাভ থাকে বছরে ২২০ কোটি। ফলে বড় বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের তুলনায় বেশি টাকা দিতে ইএসআই কর্পোরেশনের অসুবিধা হয় না। সমস্যা হয় রাজ্যের।
রাজীববাবুর ব্যাখ্যা, “ইএসআই হাসপাতালের বাইরে অন্য কোনও হাসপাতালে ইএসআই-ভুক্ত কোনও রোগীর চিকিৎসা চললে তাঁর ওষুধ ও থেরাপির অর্ধেক খরচ কেন্দ্র ও বাকি অর্ধেকটা রাজ্যকে দিতে হয়। যত নামী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হবে, রাজ্যের অংশের খরচও তত বাড়বে। এ দিকে, তার লাভ কেন্দ্রের মতো নয়। ফলে লোকসান অনেক বেশি।” তিনি জানান, তাই বলে রাজ্য সরকার টাকা বাঁচাতে চিকিৎসার মানের ক্ষেত্রে সমঝোতা করছে, এটা যেন মনে করা না হয়। কারণ, কলকাতার বেশ কিছু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার মান এখন যে কোনও ভাল বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে তুলনীয়।
প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহুর পাল্টা অভিযোগ, “সরকারি হাসপাতালের মান যতই ভাল হোক, সেখানে জায়গা কম, শয্যা নেই, রোগীর চাপ। তার উপরে ইএসআই-রোগীরা সেখানে গেলে আর দেখতে হবে না। কেউ পরিষেবা পাবেন না। তাই আমরা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি ভাঙিনি।” এই যুক্তি উড়িয়ে বর্তমান শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর যুক্তি, “সেটা ওঁদের ভাবতে হবে না। আমরা বেসরকারির বদলে একাধিক সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করব। সেই সঙ্গে ইএসআই হাসপাতালে এত উন্নত যন্ত্র আনব যাতে বাইরের হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে না হয়। এটা ওঁরা করেননি। কারণ, ওঁরা কিছু স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীর সুবিধা করতে চেয়েছিলেন।”
|