এঁকেবেঁকে ছোটা মারুতি ভ্যান থেকে উড়ে আসছে বোমা। মোটরবাইকে পিছু ধাওয়া করা চার জন জবাব দিচ্ছে রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে। রাস্তা দিয়েও আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ছুটছে কয়েকজন। আতঙ্কে পালাতে পথ পাচ্ছেন না মানুষ। শনিবারের বারবেলায় দুই দল দুষ্কৃতীর ওই লড়াইয়ে মিনিট পনেরোর জন্য যেন ‘ওয়াসেপুর’ হয়ে উঠেছিল শ্রীরামপুরের চাতরা এলাকা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশও মোটরবাইকে চেপে হাজির হলে তাদের দিকেও বোমা ছোড়া হয়। তবে দুই দুষ্কৃতী ছাড়া ওই বোমা-গুলির লড়াইয়ে আর কেউ আহত হননি। শেষমেশ পুলিশ ছয় দুষ্কৃতীকে ধরে। বাজেয়াপ্ত করে দু’টি পাইপগান, ছয় রাউন্ড গুলি এবং ১৫টি বোমা। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “পুরনো ঝামেলা থেকে শ্রীরামপুরে দুষ্কৃতীদের দু’টি গোষ্ঠীর এই লড়াই।”
অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ (২০১২) ছবিতে দু’দল দুষ্কৃতীর এলাকা দখলের লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছেন বহু দর্শক। ছবিতে লড়াই হয়েছিল এমএলএ রামাধীর সিংহের দলবলের সঙ্গে শাহিদ খান-সুলতান খানের দলের। শ্রীরামপুরে যুযুধান, হুগলির দাগী দুষ্কৃতী হুব্বা শ্যামলের দাদা বাচ্চু ওরফে মিহির দাস ও তার শাগরেদরা এবং রমেশ মাহাতো নামে আর এক দুষ্কৃতীর দলবল। পুলিশ সূত্রের খবর, এখানেও নেপথ্যে রয়েছেন শাসক দলের এক বিধায়ক। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এ কথা মানেননি। |
বন্ধ কলকাখানার জমির দখলই দু’দলের লড়াইয়ের কারণ। বছর দেড়েক আগে হুব্বা শ্যামল খুন হওয়ার পর থেকে উত্তরপাড়া-কোন্নগর-রিষড়া-শ্রীরামপুর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রমেশ মাহাতোর দলবল। রমেশ বর্তমানে হাজতবাস করলেও এলাকার অনেকটাই এখন তার দখলে। ইদানীং রমেশের দলের দাপাদাপিও বেড়েছে।
পুলিশের দাবি, এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছে না বাচ্চু। সে-ও এলাকায় জমি ধরে রাখতে চায়। তাই রমেশের ‘টার্গেট’ হয়ে উঠেছে বাচ্চু। এর আগেও কোন্নগরে রমেশের দলবলের হামলার মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছে বাচ্চু। তবে এ দিনের লড়াইয়ের পরে সে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নদিয়ার শক্তিনগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বোমায় জখম এক দুষ্কৃতীকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরনো একটি মামলায় এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল বাচ্চু। আদালত থেকে বেরিয়ে সে একটি মেরুন রঙা মারুতি ভ্যানে কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে ধোবিঘাট হয়ে চাতরার দিকে যাচ্ছিল। চাতরায় বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে লুকিয়ে ছিল বিরোধী গোষ্ঠীর ১৫-১৬ জন দুষ্কৃতী। বাচ্চুর গাড়ি সেখানে পৌঁছতেই তারা বেরিয়ে আসে। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছোটে গাড়িটির দিকে। তাতেও না থেমে বাচ্চুরা চলে যায় চাতরা নন্দলাল ইনস্টিটিউশনের সামনে। বেলা তখন ২টো। বোমা-গুলির মাঝে স্কুল ফেরত ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাড়ির পথ ধরা অভিভাবকেরা পরিত্রাহি দৌড়ন আশপাশের গলিতে।
ইতিমধ্যে মোটরবাইকে চেপে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তখন বাচ্চুর গাড়িতে হামলাকারীরা স্টেশনের দিকে পালায়। বাচ্চুর গাড়ি গতি বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় শেওড়াফুলির দিকে। পুলিশের দাবি, রমেশের শাগরেদ গুজিয়া এবং লিটনের নেতৃত্বে বাচ্চুর উপরে হামলা চালানো হয়। ওই দু’জন-সহ অন্য দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
হুব্বা শ্যামল খুনের পরে যাঁরা ভেবেছিলেন আতঙ্কের দিন শেষ হয়েছে, এ দিনের ঘটনার পরে তাঁরা নতুন করে আতঙ্কে ভুগছেন। চাতরার অনেকেই বলেন, “এ সব যে কবে বন্ধ হবে কে জানে!” |