বিপণনের তূণে এখন নতুন তির মোবাইলে ভিডিও-বিজ্ঞাপন।
প্রথাগত বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বিপণনের দুনিয়ায় এই নয়া অস্ত্রের কদর বাড়ছে দ্রুতগতিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ মূলত তিনটি। এক, মোবাইলে নিজের সুবিধা মতো সময়ে তা দেখার সুযোগ। দুই, ভিডিওয় প্রাঞ্জল ভাবে কোনও বক্তব্যকে তুলে ধরার সুবিধা। আর তিন (এবং সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ), এর ‘অব্যর্থ’ লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা। কারণ, এক লপ্তে সকলকে না-পাঠিয়ে এই বিজ্ঞাপন পাঠানো যায় শুধু তাঁদের মোবাইলে, যাঁদের নিজেদের পণ্য বা পরিষেবার সম্ভাব্য ক্রেতা মনে করছে কোনও সংস্থা।
যাঁরা লক্ষ্য (টার্গেট কাস্টমার), ঠিক তাঁদের কাছেই বিজ্ঞাপনী বার্তা পৌঁছে দিতে মোবাইলকে বহু দিনই হাতিয়ার করেছে বিপণন দুনিয়া। তা করা শুরু মূলত এসএমএস মারফত। কিন্তু সেখানে যেমন গ্রাহকের ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ (ডিএনডি)-এর প্রাচীর টপকানোর ব্যাপার আছে, তেমনই আছে (ভিডিও ছাড়া) শুধুমাত্র লেখার মাধ্যমে কোনও পণ্য বা পরিষেবাকে আকর্ষণীয় করে তোলার অসুবিধা। আর সেই সমস্যা এড়াতেই মোবাইলে ভিডিও-বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার করছে বিভিন্ন সংস্থা।
যেমন, বাজারে নতুন গাড়ি আনার সময়ে প্রথাগত বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি মোবাইল-ভিডিও তৈরি করেছিল একটি গাড়ি সংস্থা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মাত্র চার সপ্তাহে তা দেখা হয়েছে দু’লক্ষ বার! একই ভাবে সম্ভাব্য ক্রেতাদের মোবাইলে পৌঁছে যাচ্ছে জলের ফিল্টার থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও।
এর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার রহস্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই ধরনের ভিডিও নির্মাতা সংস্থা ভ্যালু ফার্স্ট-এর প্রধান বিশ্বদীপ বজাজের দাবি, “নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছনোর অন্যতম সেরা উপায় মোবাইল-ভিডিও। এখন অধিকাংশ মানুষেরই প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী মোবাইল ফোন। সুবিধা হল, এতে কেউ তাঁর নিজের সময় মতো ভিডিও দেখতে পারেন।” তা ছাড়া, এসএমএসের মতো না-এড়িয়ে এ ক্ষেত্রে আগ্রহী অনেকে নিজে থেকেই এই ভিডিও ডাউনলোড করেন। পরিচিতদের কাছে পাঠিয়ে দেন হোয়াট্স অ্যাপ-এর মতো বিভিন্ন চ্যাট মারফতও।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভিডিও-বিজ্ঞাপন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ওই ধরনের চ্যাটের বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তা। হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইলে শুধু লিখে নিরন্তর চ্যাট করে চললেও তাতে প্রাণের ছোঁয়া হয়তো একটু কম। কারণ, এক জনের গলার স্বর বা মুখের অভিব্যক্তি সেখানে অনুপস্থিত। সেই খামতি কিন্তু পুষিয়ে দিচ্ছে মোবাইল-ভিডিওর প্রযুক্তি। সেখানে নিজের কথা ও ছবি নিজেই ‘রেকর্ড’ করে তৈরি এক মিনিটের ভিডিও নিমেষে চ্যাট মারফত চলে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে। হয়তো সেই কারণেই বিশ্ব জুড়ে তার এত জনপ্রিয়তা। ব্যতিক্রম নয় ভারতও। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে মোবাইল ভিডিও-র চল বেড়েছে ৩০০ শতাংশ।
স্বাভাবিক ভাবেই মোবাইল-ভিডিওর এই ঊর্ধ্বমুখী জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে বিজ্ঞাপন কৌশল সাজাচ্ছে বিপণন দুনিয়া। দেখা যাচ্ছে, এখন ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ২০ শতাংশই রয়েছে মোবাইল-বিজ্ঞাপনের দখলে। যে-বাজারের মাপ প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। আবার তার মধ্যে মোবাইল ভিডিও-র ব্যবসা বৃদ্ধির হারই সর্বোচ্চ। বিপণনের ছটায় ক্রেতার মন গলাতে কর্পোরেট দুনিয়ার অন্যতম বাজি এখন মোবাইল ভিডিও-ই। |