একশো দিনের কাজে বেনিয়ম ও আর্থিক বিধিভঙ্গের অভিযোগে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং চার কর্মীকে শো-কজ করেছেন বিডিও (রঘুনাথপুর ২ ব্লক) উৎপল ঘোষ। সম্প্রতি তিনি তৃণমূল পরিচালিত নতুনডি-কলাগড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রামপদ বাউরি, নির্মাণ সহায়ক উজ্জল ধীবর,কার্যনির্বাহী সহায়ক গৌতম ঘোষ, পঞ্চায়েতের সচিব বনমালি দুবে গোস্বামী এবং জব অ্যাসিস্ট্যান্ট সুব্রত চক্রবর্তীকে শো-কজ করেছেন বিডিও। প্রধান ও কর্মীরা শো-কজের জবাব দিলেও প্রাথমিকভাবে তাতে বিডিও সন্তুষ্ট নন বলেই জানা যাচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাশীবেড়া গ্রামে ভাগাহার বাঁধ নামে একটি পুকুরের সংস্কার করেছে ওই পঞ্চায়েত। সংস্কারের পরে পুকুরের মাটি তুলে দেওয়া হয়েছে গ্রামেরই একটি রাস্তা নির্মাণে। দু’টি কাজই হয়েছে একশো দিন কাজের প্রকল্পে। কিন্তু, প্রশাসনিক পরিদর্শনে দেখা যায়, মাটি তুলে অন্যত্র সরবরাহের কাজে কোনও টেন্ডার ডাকেনি পঞ্চায়েত। কাজের পরে বিল তৈরিতেও নিয়ম মানা হয়নি।
পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, পুকুরের মাটি তুলে রাস্তা তৈরির জন্য দুই দফায় ৪৬ হাজার ১৫ টাকা এবং ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করেছিল পঞ্চায়েত। প্রথম দফার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে মাটি সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে। কিন্তু, বেনিয়ম চোখে পড়ার পরেই দ্বিতীয় দফার বিল আটকে দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে কেন নির্মাণ দরপত্র না ডেকেই নির্দিষ্ট এক ঠিকাদারকে বরাত দিয়েছেন।
পঞ্চায়েতের কার্যনির্বাহী সহায়ক, সচিব ও জব আ্যসিন্ট্যান্টের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী কোনও কাজের বিল জমা দেওয়ার সময়ে আসল ‘ভাউচার’ জমা দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রতিটি বিলের ফোটোকপি জমা পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, যে সময়ে সংস্কারের কাজ হয়েছিল, তখন পুকুরে মাটির পরিবর্তে পাঁক ছিল। তা ছাড়া দুই লক্ষাধিক টাকায় যে পরিমাণ মাটি পাওয়া যায়, ততটা মাটি আদৌও কাটা হয়নি পুকুরটিতে। ফলে, রাস্তায় মাটি দেওয়ার কাজ কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছে পঞ্চায়েত, তা নিয়েও সংশয় আছে গ্রামবাসীদের।
ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়তের কর্মীরা নিয়ম মানেননি। গত আর্থিক বছরের (২০১২-’১৩) শেষে পঞ্চায়েতের কাজের বিশদ পরিদর্শন করতে গিয়েই এই সব ‘বেনিয়ম’ নজরে আসে ব্লক প্রশাসনের। ব্লক প্রশাসনের মতে, পঞ্চায়েত প্রধানও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। তাই প্রধান-সহ পাঁচ জনকে শো-কজ করা হয়েছে।
বিডিও উৎপল ঘোষ বলেন, “নতুনডি পঞ্চায়েতের একটি কাজে আর্থিক ও ‘টেকনিক্যাল’ বেনিয়ম নজরে আসায় প্রধান-সহ ৫ জনকে শো-কজ করা হয়েছে। তাঁরা উত্তর দিয়েছেন। ওই বিষয়ে আরও তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” প্রধান রামপদবাবু বলেন, “দরপত্র না ডেকে এবং আসল বিলের পরিবর্তে ফোটোকপি জমা দেওয়া যায় না, এই নিয়মের কথা জানি না বলেই কাজ করেছিলাম। প্রথম পর্যায়ের বিল জমা দেওয়ার পরে ভুল বুঝতে পেরে পরের বিল জমা দিইনি।” |