সাধের মোবাইল ফোনটাই শেষমেশ হয়ে দাঁড়াল যত নষ্টের গোড়া।
হবু শ্বশুরবাড়িতে বিয়ের পাকা কথা বলতে গিয়েছিল বছর পঁয়তাল্লিশের লুৎফার হক ওরফে ফজলু। মঙ্গলবার সাজানো পাতে তখন সবেমাত্র গরম মাংস পড়েছে। হঠাৎ বেজে ওঠে মোবাইল ফোন। ও প্রান্তের প্রশ্নের জবাবে লুৎফার বলে, “আমি তো এখন বসিরহাটের বাগুণ্ডি গ্রামে হবু শ্বশুরবাড়িতে।” এর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই হইহই করে ঘরে ঢুকে পড়েন এক দল স্থানীয় বাসিন্দা। শুরু হয় বেদম মার। গ্রামের একটি বাড়িতে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয় তাকে। বুধবার সকালে ঘর থেকে বের করে একটি আমগাছে বাঁধা হয়। আবার চলে উত্তম-মধ্যম। কেটে নেওয়া
|
লুৎফার |
হয় চুল। পুলিশ ডাকা হয়।
কী দোষ লুৎফারের?
দেগঙ্গার ভাসিলিয়ার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি লুৎফারের শখ, ঘন ঘন বউ পাল্টানো। পুলিশকে জানিয়েছে, প্রথম বউয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় বউ অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। তাই আর একটা বিয়ে করার সাধ জেগেছিল। বাগুণ্ডি পঞ্চায়েতের প্রধান অনুপ রায় অবশ্য দাবি করেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, পাঁচ-ছ’টি বিয়ে করেছে লুৎফার।’’
এত দিন বেঁচে আসা লুৎফার ধরা পড়ল কী করে?
তৃতীয় পক্ষের হবু স্ত্রীর বাড়ি বাগুণ্ডিতে। লুৎফার ভুলে গিয়েছিল, প্রথম স্ত্রীর ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িও সেই গ্রামেই। ফলে, নতুন বিয়ের খবরটা ধামাচাপা থাকেনি।
লুৎফারের মোবাইল নম্বর ছিল কারও কারও কাছে। ফোন করা হয় তাকে। বাকি ঘটনাটা লুৎফারের চোখের জলে ভেজা। আদালতের পথে উদাস ভাবে সে বলে, “আমার একা থাকার কষ্টটা কেউ বুঝল না। মোবাইলটাই সব গুলিয়ে দিল, বুঝলেন।’’
বৃহস্পতিবার বসিরহাট আদালতের বিচারক অবশ্য তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। বসিরহাটের আইসি শুভাশিস বণিক বলেন, “পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে। জেরায় সে তিনটি বিয়ের কথা স্বীকার করেছে। তবে আমাদের ধারণা, সংখ্যাটা আরও বেশি।”
পুলিশ ও গ্রামবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনে মহিলাদের সঙ্গে আলাপ জমাত লুৎফার। সর্ম্পক একটু বাড়লেই সটান বিয়ের প্রস্তাব। বলত, বিয়েতে যৌতুক নেবে না। যা শুনে অনেক মেয়ের বাবাই হাতে চাঁদ পেতেন। বাগুণ্ডি গ্রামের দরিদ্র মেয়েটির পরিবারও বিয়েতে রাজি হয়েছিল সে কারণেই। |