দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রবিবরণে গাইলেন বন্দিরাও
চার দেওয়ালে আটকে ওঁদের জীবন। সেই ঘেরাটোপেই চলে সংস্কৃতি চর্চা। বৃহস্পতিবার সকালে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন ওঁরা মেদিনীপুর সংশোধনাগারের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি নিখিল সেনাপতি, মান্নান খান, অনাদি মাইতি, শ্যামল অধিকারীরা।
সংশোধনাগারেই আয়োজন করা হয়েছিল রবীন্দ্রজয়ন্তীর। একটি ঘরে কবিগুরুর ছবি রেখে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সকাল ১১টা নাগাদ অতিথিরা আসতেই শুরু হল অনুষ্ঠান। বন্দিদের গাইলেন, ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও...’। অতিথি আসনে তখন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী, মেদিনীপুরের বিশিষ্ট শিল্পী অলোকবরণ মাইতি, সুস্মিতা মণ্ডল, রঞ্জন জানা প্রমুখ। সকলেই মুগ্ধ হয়ে শুনলেন বন্দিদের গান। অলোকবরণবাবু বলছিলেন, “সংশোধনাগারের আবাসিকদের অনুষ্ঠান আগেও দেখেছি। ওঁদের যত দেখি, ততই মুগ্ধ হই। সংস্কৃতি-চর্চার অনুপ্রেরণা পাই।” আবাসিকদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন আধিকারিকেরাও। সংশোধনাগারের ওয়েলফেয়ার অফিসার মহুয়া বাগচি মিত্র বলছিলেন, “এমন অনুষ্ঠানের অনুভূতিটাই আলাদা। অন্য রকম।”
তমলুকের শঙ্করআড়ায় কবি-প্রণাম। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
বৃহস্পতিবার দুই মেদিনীপুর জেলা জুড়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৩তম জন্মজয়ন্তী পালন হয়। স্কুল-কলেজ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস, সর্বত্র দিনটি উদ্যাপিত হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে সকালে মেদিনীপুরে পদযাত্রা বেরোয়। সন্ধ্যায় বিদ্যাসাগর হলের মাঠে অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনি, বিধায়ক মৃগেন মাইতি। জেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের কর্মী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগেও দিনটি পালন করা হয়।
পিছিয়ে ছিল না জঙ্গলমহলও। লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি এলাকায় ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তন্ময় রায়ের উদ্যোগে ‘কবি প্রণাম’-এর আয়োজন করা হয়। তন্ময়ের নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরিতে সামিল হন সংগঠনের কর্মীরা। এরপর রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। ‘লালগড় সজীব সঙ্ঘ’-এর উদ্যোগে স্থানীয় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের সভাঘরে সারা দিন ধরে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ক্যুইজ ও ‘বসে আঁকো’ প্রতিযোগিতাও হয়। ওই অনুষ্ঠানে লালগড়ের ‘সুস্বন’ সাহিত্য পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়।
ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ‘কবি-প্রণাম’-এর আয়োজন করেছিল। প্রভাতী অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্কে বিশ্বকবির পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার প্রমুখ। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানটি হয় মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সভাঘরে। সেখানে কথায় ও গানে রবীন্দ্র-স্মরণে অংশ নেন স্থানীয় শিল্পীরা। এদিন ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগারেও রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রামের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রদেব ভট্টাচার্য। ইন্দ্রদেববাবু রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। উপ সংশোধনাগার নিয়ামক রাহুল বর্মন রবীন্দ্রনাথের প্রশ্ন কবিতাটি আবৃত্তি করেন। ‘সর্বজনীন রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর অপরিহার্যতা’ নিয়ে আলোচনা করেন জেলবন্দি যুব তৃণমূল নেতা জলধর পণ্ডা। অন্য বন্দিরাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ঝাড়গ্রামের ‘দুরন্ত সোসাইটি’র উদ্যোগে সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরের সুভাষ পার্কে ‘কবি-প্রণাম’-এর আয়োজন করা হয়। পুরাতন ঝাড়গ্রামের ‘উন্নয়নী সঙ্ঘে’র পরিচালনায় ‘হৃদ মাঝারে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান হয়। ঝাড়গ্রাম শহরের ‘গীতসুধা’ সংস্থার উদ্যোগে স্থানীয় দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে সকালে ও সন্ধ্যায় দু’টি পর্বে অনুষ্ঠান হয়। গীতসুধার সঞ্চালক তপনজ্যোতি সেনগুপ্ত ও অসীমা সেনগুপ্তের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা ও নাচ পরিবেশন করেন সংস্থার শিল্পীরা।
সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির মঞ্চে ছোটদের রবি-প্রণাম। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপারের অফিস প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মাল্যদান করেন জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন-সহ পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। প্রতিটি থানায় সকাল থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত চলছিল। দিঘা থানা প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বিকেলে চণ্ডীপুর থানা প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠানে এলাকার দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের পুস্তক ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তমলুক শহরের মানিকতলা মোড়ে অনুষ্ঠান করে তমলুক শহর রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি। জেলা পরিষদ অফিস, জেলা প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রমূর্তিতে মাল্যদানের পরে সঙ্গীত পরিবেশন হয়। বিকেলে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীর বলাকা মঞ্চে রবীন্দ্র-স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তমলুক শহরের নিমতলা মোড় এলাকায় ইয়ং স্টার ক্লাব অনুষ্ঠান করে। নোনাকুড়ি বাজারে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হয় বাজকুল কলেজ প্রাঙ্গণে।
কাঁথি শহরে উত্তাপ সাহিত্য গোষ্ঠী কবিতা, গান ও আলোচনার মধ্য দিয়ে কবি প্রণাম করে। কবিতা পাঠ করেন এস মহিউদ্দিন, দীপক হোতা, ইভা মাইতি, বেলা খাতুন, দীপক রক্ষিত। সঙ্গীত পরিবেশন করেন নটেন দাস, মঞ্জু তোলা, দেবকুমার দাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আলোচনা করেন সত্যরঞ্জন জানা, কৃষ্ণপদ পঞ্চাধ্যায়ী ও রঞ্জন জানা। কাজলা জনকল্যাণ সমিতির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি নিয়ে প্রভাতফেরি করার পরে ‘জুতো আবিষ্কার’ নাটক মঞ্চস্থ করে। কাঁথি ক্লাব শিশুমহল ও সবুজমেলার পক্ষ থেকে কবিপ্রণামের আয়োজন করা হয়। রামনগরে সকালে অঙ্কুর নৃত্যগোষ্ঠী প্রভাতফেরির পরে নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করে। পরিচালনা করেন নৃত্য শিল্পী কল্যাণ দাস। বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে আনন্দমঠ। কাঁথি ৩ ব্লকের কুমির্দাতে নেতাজি মিলন সঙ্ঘের উদ্যোগে কবিপ্রণামের অনুষ্ঠানে আলোচনায় যোগ দেন অধ্যাপক অমলেন্দু বিকাশ জানা, স্নেহাংশু শেখর জানা ও অনন্ত কুমার দ্বিবেদী। কাঁথি পুরসভায় বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়।
রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে দিনভর চলেছে সাউন্ড বক্স। ভেসে এসেছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর। সব মিলিয়ে এক অন্য আবহে ধরা দিয়েছে দিনটি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.