হেনরি, তাম্বা, বিলাল ডেঞ্জিলদের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতটা বেনোলিনের সমুদ্র সৈকতের হোটেলে কাটিয়েছেন চার্চিল পরিবারের ছেলেরা। পার্টি ভেঙেছে বুধবার ভোরে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে আনা যায়নি সেখানে। কারণ সংযত এবং শৃঙ্খলিত জীবনের বাইরে পা বাড়াতে তিনি নারাজ।
সুভাষ ভৌমিকের রেকর্ড নিয়ে হইচই হচ্ছে দেশজুড়ে। কিন্তু কোচের মতোই এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী হয়ে গিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন চার্চিলের গোলকিপার, বর্ধমানের ছেলে সন্দীপ নন্দী। চারটি আলাদা-আলাদা ক্লাবের (মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহীন্দ্রা, চার্চিল) গোলে দাঁড়িয়ে পাঁচ বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করা হয়ে গেল সন্দীপের। সুভাষের মতো কলকাতার ক্লাবে কল্কে না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলে এসেছিলেন গোয়ায়। আই লিগের ২৫টি ম্যাচের সব ক’টিতে খেলেছেন এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বয়োজেষ্ঠ গোলকিপার। এবং আই লিগে মাত্র তিনটি ম্যাচ হেরেছে চার্চিল।
সন্দীপ-হিরে সুভাষ কুড়িয়ে নেওয়ার আগে সেটা চেয়েছিলেন মর্গ্যানও। কিন্তু লাল-হলুদ কর্তারা সেটা হতে দেননি। ৩৭ বছর বয়সেও এই সাফল্যের পিছনে কি ইস্টবেঙ্গলের অপমান?
“ইস্টবেঙ্গল সচিব বলেছিলেন, আমার লাল-হলুদ জার্সি পরার যোগ্যতা নেই। উনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন, আমার ক্লাব জীবনের সেরা সাফল্য ইস্টবেঙ্গলেই। আসিয়ান কাপে আমি টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারের ট্রফি পেয়েছিলাম। এ বার সুভাষস্যরের ডাক পেয়ে গোয়ায় এসে বারো দিন ওঁর বাড়িতে ছিলাম। যাঁরা বলেছিলেন আমার যোগ্যতা নেই। শেষ হয়ে গিয়েছি, তাঁদের উৎসর্গ করছি এ বারের আই লিগ জয়টা,” বলছিলেন জেদি আর অভিমানী সন্দীপ।
তাঁর সমসাময়িক প্রায় সব গোলকিপারই অবসর নিয়ে ফেলেছেন। সন্দীপ টানা পনেরো বছর নাগাড়ে খেলে যাচ্ছেন। রসায়নটা কী? চার্চিলের ছিপছিপে চেহারার বাঙালি গোলকিপার বললেন, “কঠোর অনুশীলন। নিজেকে ফিট রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। সুভাষস্যরের ট্রেনিংয়ের পরেও আমি আলাদা অনুশীলন করি। সুভাষস্যরকে বলেছিলাম, আমার ছোটবেলার কোচ গৌতম সরকারকে গোলকিপার কোচ করে চার্চিলে আনুন। উনি এনেছেন। যার সুফল পেয়েছি আমি। আমাদের দলও।”
কিন্তু এই বয়সেও এ রকম ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্স? “আপনি বিশ্ব ফুটবলে দেখুন। গোলকিপারদের ক্ষেত্রে বয়স কোনও বাধা নয়। আমি অলিভার কানের ভক্ত। উনিও অনেক বয়স পর্যন্ত খেলেছেন। ফান ডার সর-ও খেলেছেন পঁয়তাল্লিশে। আমি পারব না কেন?” বললেন সন্দীপ। চোট পেয়ে ভারতীয় টিম থেকে বাইরে চলে যাওয়ার পর জাতীয় দলেও আবার ফিরে এসেছেন। “তবে দেশের জার্সিতে আমার সেরাটা এখনও খেলা হয়নি। সেটাও পূরণ করে দেখিয়ে দেব।” |